Friday, September 22, 2023
spot_img
Homeধর্মমানুষকে কষ্ট দেওয়া আল্লাহর অপছন্দ

মানুষকে কষ্ট দেওয়া আল্লাহর অপছন্দ

সৃষ্টির সেরা মানুষ একে অপরকে কিংবা মুসলমান অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। কবি আজিজুর রহমানের রচনা:

‘কারো মনে দিও না আঘাত

সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে…’।

এক আরব কবির উচ্চারণ, ‘তরবারির আঘাতের ক্ষতের প্রতিষেধক আছে; কিন্তু জিহ্বার ক্ষতের কোনো প্রতিষেধক নেই।’ (তুহফাতুল আহওয়াজি)।

মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দেবে না, তাদের লজ্জা দেবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধান করবে না। কেননা, যে মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধান করে আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দেবেন…।’ (তিরমিজি)

কথার মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হলো : গালি দেওয়া, গিবাত-চোগলখুরি,  খোঁটা দেওয়া, তুচ্ছজ্ঞান করা ইত্যাদি। আর কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হলো : জুলুম করা, ধোঁকা-প্রতারণা, রাস্তা বন্ধ করা, সম্পদ জবরদখল করা ও হত্যা করা ইত্যাদি বোঝায়।

মন্দ নামে ডাকা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা হলো ফাসেকি কাজ। যারা এ থেকে তাওবা করে না, তারা সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

আমাদের সবারই কিছু না কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তাই মানুষকে বিদ্রুপ-উপহাস করা উচিত নয়। এতে মানুষ কষ্ট পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, কোনো সম্প্রদায় যেন কোনো সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

তুচ্ছজ্ঞান করলে, হেয় ভাবলে মানুষ খুবই কষ্ট পায়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্থ করবে না এবং হেয় করবে না…।’ (মুসলিম)

মানুষের প্রতি কুধারণা পোষণ করা উচিত নয়, এতে মানুষ কষ্ট পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)

পৃথিবীর সব মানুষ সমান নয়। কেউ ধনী, কেউ গরিব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা এমন সব বিষয় আকাঙ্ক্ষা করো না, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩২)

ধনীরা গরিবদের দান করে খোঁটা দিলে তারা খুব কষ্ট পায়। এতে দানের সওয়াব নষ্ট হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানগুলোকে বিনষ্ট করো না—ওই ব্যক্তির মতো, যে তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং সে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না। ওই ব্যক্তির উদাহরণ একটি মসৃণ পাথরখণ্ডের মতো, যার ওপর কিছু মাটি জমে ছিল। অতঃপর সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হলো ও তাকে পরিষ্কার করে রেখে গেল। এভাবে তারা যা কিছু উপার্জন করে, সেখান থেকে কোনো সুফল তারা পায় না…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

পরিশেষে মানুষের কর্তব্য হলো ধর্ম ও দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করা। জীবনের খেলাঘরের অস্তাচলে অর্থকষ্ট রোগ-ব্যাধিতে ভুগে সহসাই আমাদের পাড়ি জমাতে হবে, না-ফেরার দেশে। আর আমাদের অমরত্ব লাভের উপায় হলো সদাচার, মানবকল্যাণ ও পরপারে জান্নাতিসুখে থাকার অবলম্বন জোগাড় করা।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments