Saturday, June 10, 2023
spot_img
Homeজাতীয়মাত্র তিন বছরে আরাভ খানের ‘অলৌকিক’ উত্থান

মাত্র তিন বছরে আরাভ খানের ‘অলৌকিক’ উত্থান

মাত্র তিন বছরে অলৌকিক উত্থান হয়েছে পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আরাভ খানের। দুবাইয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ তার। কয়েকদিন আগে সেলিব্রেটিদের দিয়ে শতকোটি টাকার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করিয়েছেন। 

এসব ঘিরে নানা আলোচনার পর দেশে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রের নিয়ন্ত্রক কারা, তা জানতে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের ধারণা, আরাভের সঙ্গে দুবাই-ঢাকা-ভারত রুটে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের যোগসূত্র রয়েছে। তাই আরাভকে সামনে রেখে পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছেন, এখন তাদের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান চলছে। 

ফেসবুকে ফাঁস হওয়া আরাভ ও এক প্রবাসী সাংবাদিকের কথোপকথন নিয়ে চলছে নানা হিসাবনিকাশ। ওই কথোপকথনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী এক রাজনীতিক এবং পুলিশের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। 

এই নামগুলো সামনে আনার নেপথ্যে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের হাত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বর্ণ চোরাকারবারিদের অত্যন্ত পছন্দের রুট দুবাই-ঢাকা-ভারত। প্রবাসে কাজ করা শ্রমিক ও ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাতায়াত হরহামেশাই। এ সুযোগটি কাজে লাগায় তারা। 

শনিবার এক অনুষ্ঠানে আরাভও স্বীকার করেন তিনি স্বর্ণ ব্যবসায় ‘মিডল ম্যান’ হিসাবে কাজ করেন। এর থেকে প্রাপ্ত ‘কমিশন’ তার আয়ের অন্যতম উৎস। এছাড়া তাকে নিয়ে এত আলোচনার পেছনে দুবাইয়ে অবস্থানরত অন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে বলেও একাধিকবার তিনি অভিযোগ করেন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘সব দোকানের চেয়ে কমে ডিসকাউন্টে মাল (স্বর্ণ বিক্রি) দেব। আর আশপাশে ১০০ দোকান থাকলেও ক্রেতারা যেখানে ডিসকাউন্ট পাবে, সেখানেই তো যাবে। এতে অন্য ব্যবসায়ীরা ভয় পেয়ে এগুলো শুরু করেছে। এ ঘোষণাটা দিয়েই ভুল করেছিলাম।’ 

তার এমন বক্তব্যে গোয়েন্দাদের সন্দেহ আরও বেড়েছে। কারণ, শুরু থেকেই আরাভের উত্থানের পেছনে শক্তিশালী গ্রুপের হাত থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, দেড় বছর ধরে স্বর্ণের ব্যবসা করা আরাভ কীভাবে পুরোনো ব্যবসায়ীদের টেক্কা দিয়ে এত কমে স্বর্ণ বিক্রির ঘোষণা দিল?

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, ‘তার স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। কেবল এটিই নয়, এখন পর্যন্ত যত অভিযোগ আছে, সব নিয়েই অনুসন্ধান চলছে। তদন্তের ক্ষেত্রে একদিকে আমরা তার অপরাধ-অপকর্ম খুঁজছি, অন্যদিকে তাকে ফেরাতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ভারত, আরব আমিরাত ও ইন্টারপোলে কথা বলেছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারাও বিষয়টি দেখছেন।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুবাইয়ের একাধিক সূত্র বলছে, দুবাই-ঢাকা-ভারত স্বর্ণ চোরাচালানকারী মাফিয়ারা অনেকটা অস্পৃশ্য থাকে। তাদের বেশির ভাগের অবস্থান এখন দুবাইয়ে। বাংলাদেশ ও ভারতে তাদের হয়ে কাজ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এই চক্রের অনেকেই র্স্বণ চোরাচালানে জড়িয়ে দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। 

পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করা এই চক্র প্রায়ই স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তখনই তাদের অপকর্ম এবং বিপুল সম্পদের বিষয় মানুষ জানতে পারে। কারণ, এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের তথ্য ফাঁস করে চলে ফায়দা হাসিলের খেলা। আরাভের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে কি না-এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

উল্লেখ্য, পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮নং আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ওই পুলিশ পরিদর্শক। এরপর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালে তিনি ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। 

ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর আগে রবিউল ওরফে আরাভ তার নামে একজনকে আত্মসমর্পণের জন্য ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করা ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। 

ওই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে। আরাভ এখন দুবাইয়ে আছেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments