Tuesday, March 28, 2023
spot_img
Homeধর্মমহানবী (সা.) ও তাঁর দাদার কথা

মহানবী (সা.) ও তাঁর দাদার কথা

নবীজি (সা.)-এর মা জননী আমেনা বিনতে ওয়াহহাব ইন্তেকাল করার পর উম্মে আয়মান তাঁকে মক্কায় নিয়ে আসেন। মক্কার কুরায়েশদের সেবায়েত আব্দুল মুত্তালিবের অধীনে তিনি বড় হতে থাকেন। আব্দুল মুত্তালিব তাঁর এই প্রপৌত্রকে খুবই  ভালোবাসতেন, কাছাকাছি রাখতেন। যেখানেই যেতেন সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন।

চোখে চোখে রাখতেন। কখনোই চোখের আড়াল হতে দিতেন না। কিনদির ইবনে সাইদ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি জাহেলি যুগে একবার হজে গমন করি। মক্কায় উপস্থিত হয়ে দেখি একজন লোক বারবার এই কথা বলছেন, হে আল্লাহ! আমার সওয়ার মুহাম্মদকে ফিরিয়ে দিন, এবং আমার ওপর আপনি রহম করেন।

আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, এই লোকটি কে? কেন এমন করছে?

তারা বলল, তিনি মক্কার সর্দার আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম। তাঁর প্রপৌত্রকে হারিয়ে যাওয়া উট আনতে পাঠিয়েছেন। ফিরে আসতে দেরি হচ্ছে। কেননা তাঁকে যে কাজেই পাঠানো হয় সফলকাম হয়ে ফিরে আসেন। এ জন্যই অস্থির হয়ে মক্কার সর্দার বারবার এই শব্দ পাঠ করছেন। এরপর দেখলাম, অল্প কিছুক্ষণ পরেই তাঁর প্রপৌত্র ফিরে আসে। তিনি তাঁকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নেন। বলেন, হে বৎস! আমি তোমার জন্য পেরেশান হয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে চোখের আড়াল করে থাকা যায় না—অস্থির লাগে। আজ থেকে আর তোমাকে চোখের আড়াল করব না। সামান্য সময়ের জন্য আমার থেকে পৃথক হতে দেব না। (সীরাতুল মুস্তাফা, পৃষ্ঠা ৮৩)

আব্দুল মুত্তালিব যেহেতু মক্কার সর্দার ছিলেন। তাই কাবার ছায়ায় মসনদসহ তাঁর জন্য একটি বিশেষ বিছানা পাতা থাকত। যে বিছানায় কেউ বসতে পারত না। কাবায় গমন করলে আব্দুল মুত্তালিব সেখানে বসতেন। তাঁর সন্তানদের সাহসই হয়ে উঠত না সেখানে বসার।

তবে আমাদের প্রিয় নবীজি সে বিশেষ বিছানায় বসতেন। আব্দুল মুত্তালিব মক্কায় যাওয়ার সময় তাঁকে নিয়ে যেতেন এবং পাশে বসাতেন। এই বয়সে এই বিশেষ বিছানায় তাঁর বসা বেয়াদবি হবে ভেবে চাচারা তাঁকে সরাতে উদ্ধত হলে আব্দুল মুত্তালিব বাধা দিতেন। টেনে তাঁর আদুরে প্রপৌত্রকে পাশে বসাতেন। আর বলতেন—তাঁকে ছেড়ে দাও, আমার এই সন্তানকে এখানে বসতে দাও, তাঁর মাঝে আমি এক অন্য রকম নূর দেখতে পাই। আব্দুল মুত্তালিব তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তাঁকে দেখে ভেতরে প্রশান্তি পেতেন। (সীরাতুল মুস্তাফা, পৃষ্ঠা ৮২)

জন্মের সপ্তম দিনের মাথায় আব্দুল মুত্তালিব নবীজির জন্য আকিকা করেন। এই আকিকা অনুষ্ঠানে সব কুরাইশকে দাওয়াত করে খাওয়ান। আর সবার সামনে তাঁর প্রিয় প্রপৌত্রের নাম ঠিক করেন মুহাম্মদ। লোকেরা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে জানতে চায়, হে মাননীয় সর্দার, আপনি এই সুন্দর নাম কিভাবে নির্ধারণ করলেন, যে নাম ইতিপূর্বে আপনার কোনো পূর্বপুরুষ রাখেনি? আব্দুল মুত্তালিব তাদের জবাবে বলেন, আমি তাঁর নাম মুহাম্মদ রাখলাম এ জন্য যে সমস্ত সৃষ্টিজীব যেন আমার এই প্রপৌত্রের প্রশংসায় মেতে ওঠে। (সীরাতুল মুস্তাফা, পৃষ্ঠা ৬২)

মক্কার এই সর্দার যত দিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর প্রপৌত্রকে এভাবে ভালোবাসায় আগলে রেখেছিলেন। মৃত্যুর আগমুহূর্তে আবু তালেবকে তাঁর দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে তিনি পরলোকগমন করেন।

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments