মহান আল্লাহ পবিত্র মক্কা নগরীর নির্দিষ্ট সীমানাকে হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করেছেন, এবং নিরাপদ ভূমি বলে আখ্যা দিয়েছেন। এখানে কেউ আশ্রয় নিলে সে নিরাপদ হয়ে যায়। হারাম শরিফে প্রতিশোধ নেওয়া ও রক্তপাত নিষিদ্ধ। হারামের ভূমিতে শিকার বধ করাও জায়েজ নয়।
বৃক্ষ কর্তন করা বৈধ নয়। এখানে পশুপাখিরাও নিরাপদ। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা—‘আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর রবের ইবাদত করতে, যিনি একে করেছেন সম্মানিত। সব কিছু তাঁরই। আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই। ’ (সুরা নামল, আয়াত : ৯১)
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই শহর (মক্কা) যেদিন আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিনই হারাম (সম্মানিত) ঘোষণা করেছেন। এটা আল্লাহর হারাম করার কারণে কিয়ামত পর্যন্ত হারামই থাকবে। ’ (বুখারি, হাদিস ৩১৮৯)
হারামের সীমানা কী হবে, সেটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে ইবরাহিম (আ.)-কে হারামের সীমানা দেখিয়ে দেন। তিনি জিবরাইলের নির্দেশনা মতে সীমানা স্তম্ভ স্থাপন করেন। মক্কা বিজয় পর্যন্ত এ অবস্থাতেই সেটি অপরিবর্তিত ছিল। ওই বছর রাসুলুল্লাহ (সা.) তামিম ইবন আসাদ আল-খুজায়ি (রা.)-কে প্রেরণ করে তা সংস্কার করেন। এরপর উমর (রা.) তাঁর খিলাফতকালে চারজন কুরাইশ ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আবারও তা সংস্কার করেন।
হারামের সীমানা মক্কার চারপাশব্যাপী বিস্তৃত। তবে সবদিকের দূরত্ব এক সমান নয়। বর্তমানে মক্কা প্রবেশের সদর রোডে হারামের সীমারেখার একটি নির্দেশনা লাগানো আছে, যা নিম্নরূপ—
পশ্চিম দিকে জেদ্দার পথে ‘আশ-শুমাইসি’ নামক স্থান পর্যন্ত। যাকে ‘আল হুদায়বিয়া’ বলা হয়। এটি মক্কা থেকে ২২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
দক্ষিণে ‘তিহামা’ হয়ে ইয়েমেন যাওয়ার পথে ‘ইজাআত লিবন’ নামক স্থান পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১২ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
পূর্বে ‘ওয়াদিয়ে উয়ায়নাহ’ নামক স্থানের পশ্চিম কিনারা পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
উত্তর-পূর্ব দিকে ‘জি-ইরানাহ’ এর পথে। শারায়ে মুজাহেদিনের গ্রাম পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৬ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
উত্তরে ‘তানঈম’ নামক স্থান পর্যন্ত। এটি মক্কা থেকে ৭ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে এখানে একটি মসজিদ আছে, যা মসজিদে আয়েশা নামে বিখ্যাত। বাঙালি হাজিরা ওমরাহর ইহরাম বাঁধতে বেশির ভাগ আয়েশা মসজিদের সীমানায় যান। মাত্র ৩০ রিয়াল খরচ করলে মসজিদে আয়েশা থেকে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসা যায়। একসঙ্গে চারজন হলে খরচটা অনেক কমে আসে।