Sunday, March 26, 2023
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকমধ্য ও পূর্ব ইউরোপ হারাতে চলেছে চীন

মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ হারাতে চলেছে চীন

মেরিকসের রিপোর্ট

বর্তমানে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সকল মনোযোগ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দিকে। তবে এই একইসময়ে চীন নিয়ে তাদের যে দীর্ঘ দিনের ধারণা ছিল তাতেও পরিবর্তন আসছে। ইউরোপ এখন নিশ্চিতভাবেই রাশিয়াকে নিজের জন্য সবথেকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। চীন যদি বরাবরের মতো রাশিয়াকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখে, তাহলে মস্কোর পাশাপাশি বেইজিংকেও একই ধরনের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করবে ইউরোপ।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর প্রচণ্ড চাপে রয়েছে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় (সিইই) দেশগুলো। ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত আছে এমন দেশগুলোতে লাখ লাখ শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তাও পাঠাচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাশিয়া নতুন করে এই দেশগুলোর উপরে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।এসময়ে যখন সবার দৃষ্টি রাশিয়ার দিকে, তখন অনেকটাই আলোচনার বাইরে রয়েছে চীন। কিন্তু এখনো সিইই দেশগুলো চীনকে ভুলে যায়নি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি বেইজিং সফর করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার সঙ্গে বৈঠকের পর সেসময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ার উদ্বেগকে সমর্থন করেছিলেন। রাশিয়ার দাবি ছিল ১৯৯৭ সালের পূর্বে ন্যাটোর যে সীমান্ত ছিল সেখানে ফিরে যেতে হবে। ন্যাটোর সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা বারবার জানিয়েছিল রাশিয়া। চীনা প্রেসিডেন্টও রাশিয়ার উদ্বেগকে সমর্থন জানান। সিইই দেশগুলো তা ভুলে যায়নি।
এক দশক আগে পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে চীন। রাশিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারতো। চীনও সেই কাতারে যুক্ত হয়। সিইই দেশগুলো চীনকে আমন্ত্রণ জানায় অনেকগুলো কারণে। তবে প্রধান কারণ ছিল, এত দিন শুধু পশ্চিমের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভাল ছিল এ অঞ্চলের দেশগুলোর। চীনকে তারা তাদের বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনার সুযোগ হিসেবে দেখেছিল। এরপর দীর্ঘ দিন চীনের সঙ্গে তাদের হানিমুন পিরিয়ডও পার হয়েছে। কিন্তু এক সময়ে এই সুদিন থমকে যায়। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সমগ্র ইউরোপে চীনের বিনিয়োগ কমতে থাকে। কোভিড-১৯ মহামারির পূর্বে হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক ও পোল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালই আগাচ্ছিল। তবে বাকি দেশগুলোতে বড় কোনো চীনা বিনিয়োগ যায়নি।
এ অঞ্চলের যেসব দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে তাদের জন্য রাজনৈতিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে চীন। ২০২০ সালে তাইওয়ান সফর করেন চেক সিনেট প্রেসিডেন্ট। সেসময় এর কঠিন মূল্য দিতে হবে জানিয়ে হুমকি দিয়েছিল চীন। লিথুয়ানিয়ায় তাইওয়ানের কার্যালয় চালুর প্রতিবাদে দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং।
মাত্র ১০ বছর আগেও চীনকে বিশাল সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখেছে সিইই দেশগুলো। কিন্তু এখন দেশগুলো বুঝতে পারছে, এই অর্থনৈতিক সুবিধা অনেকটাই মরিচিকার মতো। এছাড়া চীনের কারণে যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে তাকেও বিবেচনায় নিতে শুরু করেছে দেশগুলো। ফলে চীনের বিষয়ে ধারণা দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর। সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন দেয়ার মধ্য দিয়ে চীনবিরোধী ধারণা আরও জোরদার হয়েছে। রাশিয়া হুমকি মোকাবেলায় ইউরোপ এখন নিজেদের নিরাপত্তা কাঠামোতে বিশাল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে চায়। গত শতাব্দীতে এ অঞ্চলে নাৎসি জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে সেই ইতিহাস তারা ভুলতে পারেনি। তারা তাদের নিরাপত্তাকে এখন সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থনৈতিক টার্গেট নিয়ে তর্ক হতে পারে, তবে নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments