দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির পাথর বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং খনির মেশিনারিজ ও ইকুইপমেন্ট খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ তদন্তে পেট্রোবাংলা ও মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি (এমজিএমসিএল) একটি করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তবে যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পেট্রোবাংলা তদন্ত সম্পন্ন করেছে, সেটির প্রভাবশালী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করে এমজিএমসিএল তদন্ত কমিটি গঠন করায় তদন্তের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কৌশলে বাঁচানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে এমজিএমসিএলের বেশিরভাগ অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত রাঘববোয়ালদের পছন্দের লোকজন দিয়ে করানোয় অধিকাংশের ফলাফলই আলোর মুখ দেখেনি। এবারও একই ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের অনুসন্ধানের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালে মধ্যপাড়ায় ১২৮ মিটার গভীরে কঠিন শিলার অবস্থান আবিষ্কারের পর এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে খনি উন্নয়নের জন্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি এমওই স্বাক্ষর করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নামনাম’ ও পেট্রোবাংলার মধ্যে ফিক্সড প্রাইস টার্ন কী বেসিসে চুক্তি হয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চলে যাওয়ার সময় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে না দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; উপরন্তু বড় ধরনের আর্থিক অভিযোগ থাকার পরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পুরো বিল পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।
অথচ যে কোনো প্রকল্প শেষ হলে ওই প্রকল্পের ঠিকাদার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করেছে কিনা এবং চুক্তি অনুযায়ী কোনো মালামাল কম দিয়েছে কিনা কিংবা কাজটি যথাযথভাবে শেষ করেছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই শেষে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির উন্নয়ন প্রকল্পে এর ব্যত্যয় কেন ঘটেছে তার রহস্য উদঘাটন এবং সেই সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে কমপক্ষে ৬ হাজার কোটি টাকার পাথরের চাহিদা থাকায় শুরু থেকেই খনি উত্তোলনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এমজিএমসিএলের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা বাস্তবতার মুখ তো দেখেইনি; বরং ব্যাপক দুর্নীতি ও সীমাহীন অব্যবস্থাপনার কারণে এর ললাটে ‘লোকসানি’ প্রতিষ্ঠানের তকমা জুটেছে। দেশে প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে; অথচ এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান শক্ত কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না, যা হতাশাজনক।
সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে সরকার কঠোর হবে, এটাই প্রত্যাশা।