Friday, September 22, 2023
spot_img
Homeধর্মমদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশসহ ৮০ দেশের সাংস্কৃতিক উৎসব

মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশসহ ৮০ দেশের সাংস্কৃতিক উৎসব

সৌদি আরবের বিশ্বখ্যাত মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়েছে। গত ৪ মে এই উৎসব উদ্বোধন করেন মদিনা অঞ্চলের ডেপুটি গভর্নর প্রিন্স সউদ বিন খালিদ আল ফয়সাল। এ সময় সেখানে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রিন্স ড. মামদুহ বিন সাউদ বিন সানয়ানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, কনসালরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১৩ মে সাংস্কৃতিক এই উৎসব শেষ হবে।

১০ দিনব্যাপী এই উৎসবে ৮০টির বেশি দেশের স্টল আছে। এসব স্টলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতি, খাবার, ঐতিহ্য ও দেশীয় পোশাক তুলে ধরেন। ফলে বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশের মানুষের সামনে নিজ দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ হয়। প্রদর্শনীর শেষ দিন বিভিন্ন দেশের স্টল ও অন্যান্য আয়োজনের ওপর থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার। 

প্রতিবারের মতো এবারও এই উৎসবে আছে বাংলাদেশের স্টল। দেশীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পোশাক দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় স্টলটি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের প্রধান পিএইচডি গবেষক মোস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে ও ওজাইর রহমানের পরিচালনায় এই উৎসবে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। 

1
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশ স্টলের সামনে দর্শনার্থী ও দায়িত্বশীলরা। ছবি : মহিউদ্দিন

বাংলাদেশ স্টলের মূল দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতক শেষবর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রজব আলী। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এক ছাদের নিচে পুরো বিশ্ব স্লোগান ধারণ করে সাংস্কৃতিক এই উৎসব শুরু হয়। এবারের আয়োজনে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাবার, লোকশিল্প ও দেশীয় পোশাক তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর সাংস্কৃতিক এই উৎসবে ৯০টি দেশের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিল বাংলাদেশের স্টল।’ এবার আরো ভালো করার আশা মহিউদ্দিনের।

111
সাংস্কৃতিক উৎসবের বাংলাদেশ স্টলে বিভিন্ন শিল্পকর্ম। ছবি : মহিউদ্দিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের আদলে বাংলাদেশ স্টলটির গেট সাজানো হয়। এর সামনে রয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। পাশেই আছে ঐতিহ্যবাহী রিকশা। স্টলের ভেতর রয়েছে পোড়ামাটির বিভিন্ন শিল্পকর্ম, বাঁশের তৈরি কৃষি উপকরণ, পাটের তৈরি শিকা, বিভিন্ন পোশাক, নানা জাতের ধান, সরিষা, পাট, শাক-সবজির বীজসহ নানা জিনিস। পাশের দেয়ালে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীকী ছবি।

11
বাংলাদেশ স্টলে লাল-সবুজের পতাকা হাতে মদিনার খুদে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। ছবি : মহিউদ্দিন

স্টলের সাজসজ্জায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ইমরান ও শুহাইবুর রহমান জানান, গত ৪ মে থেকে এই উৎসব শুরু হলেও এর প্রস্তুতি রমজান মাসের ২১ তারিখ থেকে শুরু হয়। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও লাল-সবুজের ভালোবাসা ভুলা যায় না। তাই নিজ দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, নৃতত্ত্ব, মুক্তিযুদ্ধ, শিল্পকলা আরবদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়। 

11
বাংলাদেশের পতাকা হাতে রিকশায় বসা শিশুদের ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা। ছবি : মহিউদ্দিন

স্টলে দায়িত্বে থাকা মহিউদ্দিন বলেন, ‘সাংস্কৃতিক উৎসব দেখতে নানা দেশের দর্শকদের আগমন ঘটে। বিভিন্ন দেশের স্টল ঘুরে দেখেন তারা। তাদের কৌতূহলভরা প্রশ্নের জবাব দেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। প্রতিদিন সকালে মদিনার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে খুদে দর্শনার্থীরা আসে। বাংলাদেশ স্টলের সামনে রাখা রিকশার প্রতি সবার প্রবল আকর্ষণ। স্টল থেকে উপহার পাওয়া বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে রিকশার সামনে ছবি তোলেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুইটারে প্রকাশিত প্রতিদিনের ছবিগুলোতে স্টলের রিকশা ও বাংলাদেশ পতাকার ছবি থাকে। শিশুরা যখন লাল-সবুজের পতাকা হাতে পায়, তখন তাদের খুশি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। অনেক দেশের স্টল তৈরিতে সেসব দেশের বড় বড় কম্পানি স্পন্সর করতে দেখা যায়।’ 

প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে এই উৎসবের আয়োজন করে থাকে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। কেননা এখানে বিশ্বের ১৭০টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে সমবেত হয়। এর মধ্যে চার শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ইসলামী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সৌদি বাদশাহ সাউদ বিন আবদুল আজিজের নির্দেশনায় মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। গত বছর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টি গিনেস বুক রেকর্ড অর্জন করে। ইসলামী শরিয়াহ, দাওয়াহ, কোরআন, হাদিস ও আরবি বিভাগের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ফ্যাকাল্টি রয়েছে। এসব বিভাগে ১৭০টির বেশি দেশের ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। বিশ্বের ৫০টির বেশি ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের বিচিত্র সংস্কৃতির মিলনমেলা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments