৪০ দিন। নাটকীয়তা। অনুমোদন। সিদ্ধান্ত আটকে যাওয়া। ভ্যাকসিন কূটনীতি। পর্দার আড়ালে নানা তৎপরতা। বেসুরো ঢাকায় পাশের বাড়ির বিদেশ সচিবের সফর। সোশ্যাল মিডিয়ায় সিনোভ্যাকের পক্ষে উন্নয়ন সহযোগীর বার্তা। কৌতূহলী অপেক্ষা। অবশেষে সিদ্ধান্ত এলো গতকাল। সবুজ সংকেত পেলো চীন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানালেন, চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে বাংলাদেশে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানিয়েছেন এ সিদ্ধান্তকে। তারা বলছেন, জনগণের কাছে নিরাপদ টিকা পৌঁছে দেয়াকেই এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। মন্ত্রী জানিয়েছেন- চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের ওপর এই ট্রায়াল হবে। যারা ইচ্ছুক কেবল তাদেরই দেয়া হবে ভ্যাকসিন। ট্রায়ালে অংশ নেবেন চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারাও। তবে অন্যদের জন্যও দরজা খোলা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রী। জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ভারতসহ অন্যকোনো দেশ আগ্রহ দেখালে সরকার তার কার্যকারিতা যাচাই করে অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তরিক থাকবে।
অনেকটা হঠাৎই চাউর হয়েছিল খবরটি। ক্যালেন্ডারে ১৯শে জুলাই, ২০২০। জানা যায়, চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক তাদের করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল করবে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) তাদের অনুমোদনও দেয়। নীতিগতভাবে একমত হয় এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত আটকে যেতে বেশি সময় লাগেনি। বলা হয়, এরসঙ্গে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যও আসে। আইসিডিডিআর,বি’র মাধ্যমে সিনোভ্যাক ফের আবেদন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
এরইমধ্যে দ্রুতই ঘটতে থাকে নানা ঘটনা। সক্রিয় হয়ে ওঠে ভ্যাকসিন কূটনীতি। তামাম দুনিয়ার সংবাদ মাধ্যমে ইদানীং এই শব্দযুগল খুব ব্যবহার হচ্ছে। আকস্মিকভাবে গত ১৮ই আগস্ট দু’দিনের সফরে ঢাকায় পা রাখেন ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ভারতীয় মিডিয়ায় বলা হয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতেই তার এই সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন তিনি। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। তবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তার বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল করোনা ভ্যাকসিন। বৈঠক শেষে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানান, ভারতের করোনা ভ্যাকসিন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেয়া হবে বাংলাদেশকে। আর বাংলাদেশের তরফে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও জানান, ট্রায়ালসহ কোভিড-১৯ টিকা প্রস্তুতে ভারতকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
ওদিকে, সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন নিয়ে ঢাকার সংবাদপত্রে অন্তত দু’টি লেখা প্রকাশিত হয় গত কিছুদিনে। এতে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারণার জবাব দেয়া হয়। এমনই একটি সংবাদ শেয়ার করে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশকিছু নিবন্ধে সিনোভ্যাকের কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ নেতিবাচক মন্তব্যই ভিত্তিহীন।’ প্রকাশিত একটি লেখায় পাঁচ বিজ্ঞানী বানর এবং শত শত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে সফলতার কথা উল্লেখ করেন। এটাও বলা হয়, সিনোভ্যাক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশকে ১ লাখ ১০ হাজার ডোজ টিকা বিনামূল্যে প্রদান করবে। এ ছাড়া, সিনোভ্যাক বাংলাদেশে একটি যোগ্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে টিকা উৎপাদনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে।
এই যখন অবস্থা তখন কৌতূহলী দৃষ্টিতে অপেক্ষায় থাকেন পর্যবেক্ষকরা। গতকাল জানা যায় সিদ্ধান্তের কথা। সিনোভ্যাককে অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটাও বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বের ৮টি কোম্পানির ভ্যাকসিন ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ট্রায়ালের আগ্রহ দেখালে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করবে। সিনোভ্যাকের টিকার ট্রায়ালের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের কাছে টিকা পৌঁছাতে হলে এখনই ট্রায়ালসহ সামগ্রিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ এরইমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে টিকার জন্য আবেদন করেছে। সেক্ষেত্রে ৩ কোটি ৪০ লাখের মতো টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যেতে পারে। তবে তা পাওয়া যাবে ধাপে ধাপে। কিন্তু বাকি টিকা ক্রয় করতে হবে বা কোনো না কোনোভাবে উৎপাদন করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা বলেছেন: গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভ্যাকসিন ট্রায়াল ও তার অগ্রগতি সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সিনোভ্যাককে অনুমোদন দেয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আজ আলোচনা করেছি। তারা বাংলাদেশে ট্রায়াল করতে চায়। তারা আইসিডিডিআর,বি-কে ভ্যাকসিন দেবে। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীকেও প্রতিটি ভ্যাকসিন সম্পর্কে অবহিত করেছি। তিনি চিন্তাভাবনা করে আমাদের নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই ট্রায়াল চালানো হবে বলেও তিনি জানান। মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই যেকোনো দেশের ভ্যাকসিন আসুক, তার ট্রায়াল লাগবে। প্রপ্রোজাল হলো, যারা স্বেচ্ছায় আসবে, তাদের ভ্যাকসিনেরই শুধু ট্রায়াল করা হবে। তিনি বলেন, আজ ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। অফিসিয়ালি তাদের জানিয়ে দিয়েছি, আপনারা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করুন। মন্ত্রণালয় এবং আইসিডিডিআর,বি’র সহযোগিতায় এ ট্রায়াল কার্যক্রম চলবে। চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারাও চীনা সরকার এবং কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে যত তাড়াতাড়ি করা যায় তা করবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ট্রায়ালের যে খরচ হবে তারা সেটাও বহন করবেন, এ প্রতিশ্রুতিও তারা দিয়েছেন। আমরা তাদের বলেছি, আমরা ট্রায়াল করার সুযোগ দেবো। কিন্তু ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পায়। এটা তাদের বলা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতকে বলেছি তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নাগরিক এখানে রয়েছে, তাদের ওপরও ট্রায়াল দিতে। চীন, ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনের কাজ অ্যাডভান্সড স্টেজে রয়েছে। বাংলাদেশেও কয়েকটি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে।
মন্ত্রী আরো জানান, ২৪টি দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালে আছে। অনেক কোম্পানি অ্যাডভান্স পর্যায়ে রয়েছে। এরমধ্যে ৫ থেকে ৬টি তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় আছে। চায়নার ভ্যাকসিন রয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ভারতে তৈরি হবে। রাশিয়া তৈরি করছে। আমেরিকার তৈরি ভ্যাকসিনও অ্যাডভান্স পর্যায়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণের হার যেন কমে আসে সে বিষয়েও কাজ করা হবে। কারণ ভ্যাকসিন পেতেও সময় লাগবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারির আগে কোনো ভ্যাকসিন আসবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিনও এপ্রিল মে-জুনের মধ্যে হয়তো কিছু বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ পেতে পারে। মন্ত্রী বলেন, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, মাস্ক পরলে সংক্রমণ অনেক কমে আসবে। মাস্ক পরার বিষয়ে গণমাধ্যমকে বেশি করে সংবাদ প্রচার করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন ট্রায়ালে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ভারতসহ অন্য কোনো দেশ আগ্রহ দেখালে সরকার তার কার্যকারিতা যাচাই করে অনুমোদন দেবার ক্ষেত্রে আন্তরিক থাকবে। এর আগে চায়না কোম্পানি সিনোভ্যাক দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ নিতে আইসিডিডিআর,বি এর মাধ্যমে যে আবেদন করেছিল সেটির কার্যকারিতা নিয়ে সরকারের নানাবিধ বিশ্লেষণ শেষে চায়না কোম্পানিটিকে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া হলো। যত দ্রুত ভ্যাকসিন ট্রায়াল সম্পন্ন হবে ততো দ্রুত দেশ ভ্যাকসিন টিকা প্রাপ্ত হবে।
ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, চায়নার এই কোম্পানিটি গত কয়েক মাস থেকেই আইসিডিডিআর,বি এর মাধ্যমে ট্রায়ালের ব্যাপারে আমাদেরকে অনুরোধ করে আসছিল। সরকার তাদের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সব ধরনের যাচাই-বাছাই করেছে। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ট্রায়াল শুরু করেছে। তুরস্কসহ বেশকিছু দেশে ট্রায়াল শুরুর পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশকে তারা পছন্দের শীর্ষে রেখেছে শুরু থেকেই। বাংলাদেশ এই ট্রায়ালে অংশ নিলে এক লাখ পিস টিকা সামগ্রী ফ্রি লাভ করার পাশাপাশি আরো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্যাকসিন ক্রয় করতে অগ্রাধিকার পাবে বলে সরকার মনে করছে। তাছাড়া চায়না সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক দৃঢ়। সবকিছু বিবেচনা করেই চায়না ভ্যাকসিন কোম্পানিটিকে ট্রায়ালে অংশ নেবার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অন্য কোনো দেশের ট্রায়াল বাংলাদেশে হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিশ্বের ৮টি কোম্পানি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ট্রায়ালের আগ্রহ দেখালে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করবে। ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগ্রহ কতটুকু এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের অনুপাতে কিছু ভ্যাকসিন ফ্রি পাবে। তবে সরকার কেবল ফ্রি ভ্যাকসিন পেতেই বসে থাকবে না। সরকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, আইসিডিডিআর,বি এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফিরদৌসি কাদেরী, ড. খালিকুজ্জামান, ড. তাজুল ইসলাম বারী প্রমুখ। সভায় অনলাইন ‘জুম’ এর মাধ্যমে অংশ নেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি কিমিং।
আইসিডিডিআরবি’র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: গতকাল চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাককে বাংলাদেশে ট্রায়ালের (পরীক্ষা) অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণার পর আইসিডিডিআরবি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মিডিয়া ম্যানেজার একেএম তারিফুল ইসলাম খান জানান, সিনোভ্যাক-এর কোভিড-১৯ টিকার ফেজ-৩ গবেষণার আবেদন গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করে অনুমোদন দেয়ায় আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশে সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর কোভিড-১৯ টিকা আনার বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি এবং বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য অভিন্ন, যার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে দেশ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ৪ হাজার ২০০ জনের মধ্যে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে। তবে, কবে শুরু হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এদিকে গত ১৮ই জুলাই চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) একটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। ওই সময় বিএমআরসি পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জামান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে পরীক্ষা করার অনুমতি চেয়েছিল চীন। এ বিষয়ে গঠিত জাতীয় কমিটি নীতিগতভাবে তা অনুমোদন দেয়। প্রাথমিকভাবে সরকারি সাত-আটটি কোভিড হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার কথা রয়েছে। চীনের করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের এই ট্রায়ালের জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশকে (আইসিডিডিআরবি) অনুমোদন দেয় বিএমআরসি। আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশে চীনের একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার অনুমতি চায়। নিয়ম অনুসারে কোনো ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসি নীতিগত অনুমোদন দেয়। আইসিডিডিআর’বি ঠিক করবে তারা কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপে যাবেন। প্রাথমিকভাবে ৭-৮টি সরকারি কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে তারা আলোচনা করে কীভাবে পরবর্তী ধাপে ট্রায়াল শুরু করবেন, তাদের পার্টিসিপেন্ট সিলেকশন কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করবেন। এরপর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে বিভিন্ন ধাপের অনুমোদন বা অনুমতি নিতে হবে।
গতকাল চীনের সিনোভ্যাককে ট্রায়ালের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা খুব ভালোভাবে বিষয়টি নিয়েছি। মন্ত্রীকে এজন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের এখানে টিকা তৈরি করার লাইসেন্স পাবো। অনেক উপকারে আসবে। কম পয়সায় আমাদের দেশের জনগণ ভ্যাকসিন পাবেন।