সরকারের তরফ থেকে আবারও সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন সর্বোচ্চ ১৪ টাকা এবং প্রতি কেজি চিনি ১৩ টাকা বাড়ানোর ফলে ক্রেতাকে এখন এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৭২ টাকায় এবং বোতলজাত ১৯০ টাকায় কিনতে হবে। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০২ টাকা এবং প্যাকেট ১০৮ টাকায় কিনতে হবে।
অবশ্য সরকারের ঘোষণা একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ আগে থেকেই বাজারে এ দুটি পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সরকারি ঘোষণার পর অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য দুটির দাম আরও এক দফা বাড়িয়ে দিতে পারেন।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ঘোষিত দর কখনোই বাজারে প্রতিফলিত হয় না, বরং বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়। দুঃখজনক হলো, এসব তদারকির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অসাধু সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে অধিক মুনাফা লুটে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াকে। প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের দুর্ভোগ উত্তরোত্তর বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণায় মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত ১১টি নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন সেবার মূল্য এক বছরের ব্যবধানে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, ডিম, মাংস, সবজি, ভোজ্যতেল, বিবিধ খাদ্যপণ্য, কোমল পানীয়, কাপড়, জুতা, জ্বালানি ও বাসাভাড়া। এছাড়া গৃহসামগ্রী, গণপরিবহণ, বিনোদন ও শিক্ষা এবং বিবিধ পণ্য ও সেবাও রয়েছে এ তালিকায়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব পণ্য ও সেবার দাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, বিদ্যমান দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের আয় মোটেই বাড়েনি। এ প্রেক্ষাপটে জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে আপস করে জীবিকা নির্বাহ করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ।
তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করছেন; অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন উচ্চবাচ্য হয় না বললেই চলে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই-এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
সাধারণত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলে পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরের ওপর দোষারোপ করে থাকেন। এভাবে একপক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ করলেও এটি যে মূলত ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকের অভিযোগ-দেশের ব্যবসায়ীরা পকেট স্ফীত করার বাইরে অন্য কিছু ভাবেন না; জনস্বার্থকে মোটেই গুরুত্ব দেন না। ব্যবসায়ীদের এহেন আচরণ ও কর্মকাণ্ড অযৌক্তিক; অমানবিকও বটে।
এ অবস্থায় লোকঠকানো মানসিকতা পরিহার করে তেল, চিনিসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ী সমাজ আন্তরিকতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।