কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের বোধনগর ইসলামপুর গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। জানা গেছে, জমিসংক্রান্ত ঘটনায় এক ব্যক্তি খুন হওয়ার পর এ নিয়ে মামলা হলে পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় একপক্ষের লোকজন। মূলত এ সুযোগে তাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায় কিছু সুযোগসন্ধানীসহ অন্যপক্ষের লোকজন। তারা প্রতিপক্ষের অর্ধশত বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাটও চালিয়েছে।
আশ্চর্যজনক হলো, টানা ২০ দিন ধরে এমন বর্বরতা চললেও স্থানীয় থানা-পুলিশ হামলা, লুটপাট ও নৈরাজ্য রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়নি; বরং দায়সারা গোছের জবাব দিয়ে বলেছে, অপরাধীরা রাতে এসে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, যখন তারা সেখানে পাহারায় ছিলেন না। পুলিশের এমন যুক্তি হাস্যকর। সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি কোনো সময়সীমায় আবদ্ধ নয়।
‘দিন-রাতের’ অজুহাত তুলে পুলিশের দায় এড়ানোর এমন কৌশল তাই কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের কোনো স্থানেই অপরাধীরা যাতে বেপরোয়া হয়ে না ওঠে, সেদিকে পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া উচিত। ভুলে গেলে চলবে না-হত্যা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্যই পুলিশ বাহিনীর উদ্ভব ঘটেছে। মানুষ সংগত কারণেই এ বাহিনীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। তাই এক্ষেত্রে তাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা যথাযথভাবে পরিপালিত হওয়া উচিত।
সমাজে অপরাধের মাত্রা কমাতে হলে প্রথমে এর পেছনে থাকা কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি অপরাধের ঘটনা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ কমে আসবে। অবশ্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাও জরুরি। দুঃখজনক হলো, বর্তমানে রাষ্ট্রে এর ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
জাতীয় সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দল নেই। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারের ভুলক্রটিগুলো চিহ্নিত করার মতো কেউ থাকে না। এ সুযোগে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে সমাজে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এ বাস্তবতায় ভৈরবের গ্রামে তাণ্ডব সৃষ্টির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনাসহ সারা দেশে হত্যা-খুন ও অন্যান্য অপরাধ দমনে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।