Monday, March 27, 2023
spot_img
Homeধর্মভেতরের সৌন্দর্য বাইরে প্রতিফলিত হয়

ভেতরের সৌন্দর্য বাইরে প্রতিফলিত হয়

মানুষের স্বভাব তার বাহ্যিক বেশভূষা সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলা। সে বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে। মানুষ যেন তার বাহ্যিক অবয়ব দেখে ভালো বলে। এর দ্বারা যেন যশ-খ্যাতি ও সুনাম কুড়াতে পারে। দুনিয়াবি নানা সুবিধা লাভ করতে পারে। এ জন্য সে মানুষের সঙ্গে মনকাড়া আর জাদুমাখা শব্দে মনের ভাব আদান-প্রদান করে। অথচ তার ভেতরটা কুিসত ও কদর্য। ইসলাম মানুষকে বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে ভেতর সুন্দর করার বেশি জোর দিয়েছে। কারণ মানুষের ভেতর যখন সুন্দর হবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে সুন্দর হতে থাকবে। নবী-রাসুলরা সর্বপ্রথম মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করেছেন। কারণ অন্তর যখন পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন পুরো দেহই সুস্থ থকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন পুরো দেহই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তা হলো কলব বা হৃদয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৬)

এ জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবাদের দোয়া শিখিয়েছেন, আল্লাহ যেন বাহ্যিক অবস্থার চেয়ে অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে সুন্দর করে দেন। কারণ মানুষের বাইরে ভেতরের অনুসরণ করে। যদি তার ভেতর শুদ্ধ হয়ে যায়, তখন তার বাইরেও পরিশুদ্ধ হতে থাকে। আর যদি ভেতর নষ্ট হয়ে যায়, তখন তার দুর্গন্ধ বাইরে ছড়াতে থাকে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (দোয়া) শিখিয়ে বলেন, তুমি বলো, ‘হে আল্লাহ! আমার বাইরের অবস্থার চেয়ে আমার ভেতরের অবস্থাকে বেশি ভালো কর এবং আমার বাইরের অবস্থাকেও অতি উত্তম কর। হে আল্লাহ! তুমি মানুষকে যে ধন-দৌলত, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে থাক, তাতে আমাকে উত্তমগুলো দাও, যারা বিপথগামী ও বিপথগামীকারীও নয়।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮৬)

বাইরের চেয়ে ভেতর সুন্দর হওয়া, এর অর্থ এটা নয় যে ভেতরের সুন্দর করে বাইরে খারাপ রাখলেও চলবে। বরং এখানে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে বাইরের চেয়ে যেন ভেতরটা আরো সুন্দর ও পরিশুদ্ধ থাকে। অন্যথায় ভেতর ও বাইরে একটি অন্যটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

বিপরীতে কারো যদি শুধু বাহ্যিক অবস্থা সুন্দর হয়, তার ইবাদত, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-খয়রাত ইত্যাদি সবই সুন্দর করে থাকে। কিন্তু যার ভেতরটা সুন্দর নয়, যার ভেতরটা ইখলাসপূর্ণ নয়, তার এই আমল কোনো কাজে আসবে না। বরং তার ব্যাপারে রয়েছে বিশেষ সতর্কবাণী। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার (হিজাজের উপকূলীয় অঞ্চল) শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন।’ সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, ‘তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৪৫)

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ভেতরকে বাইরের চেয়ে সুন্দর করে দিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments