‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন-২০২২’ নামে নতুন একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বলা বাহুল্য, ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ করাই এ আইন প্রণয়নের লক্ষ্য। যেমন: আইনটিতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য যদি কেউ সরকারি কিংবা বেসরকারি জমি জাল দলিলের মাধ্যমে নিজের নামে লিখে নেন, তাহলে তাকে অনধিক ২ বছর এবং কমপক্ষে ৬ মাসের জেল বা ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
দাতার মালিকানা ও দখল না থাকা সত্ত্বেও কেউ অতিরিক্ত জমি লিখে নিলে তার ২ থেকে ৫ বছরের জেল এবং ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা হবে। যদি কোনো ব্যক্তি তার জমি পূর্বে বিক্রি বা হস্তান্তর করার তথ্য গোপন করে পুনরায় কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন, তাহলে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। যদি কেউ উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে নিজের প্রাপ্যতার বাইরে বেশি জমি নিজের নামে দলিল করে নেন, তাহলে তাকে অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
কেউ যদি একক বা দলগতভাবে অবৈধ উপায়ে ভূমির দখল নেন এবং দখল বজায় রাখতে অস্ত্র প্রদর্শন বা ব্যবহার করেন, তাহলে তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে এবং এ অপরাধ জামিন অযোগ্য বলে গণ্য হবে। উল্লেখ্য, আইনটিতে জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক বেশকিছু অপরাধকে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে।
দেশে ভূমি নিয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অন্ত নেই। বস্তুত এ দেশের মানুষের বিরোধের অন্যতম প্রধান কারণ ভূমিসংক্রান্ত নানা অপরাধ বললে অত্যুক্তি হবে না। এক হিসাবে দেশের মামলার মোট ৮৭ শতাংশের মূল কারণ ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ। জমি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে, এমনকি পরিবারের ভেতরেও বিরোধের সূত্রপাত হয়ে থাকে। কাজেই এ সংক্রান্ত একটি শক্তিশালী আইন থাকলে এবং এর যথাযথ প্রয়োগ হলে দেশে ভূমি নিয়ে বিরোধ অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
ভূমি নিয়ে বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অন্যতম হলো ভূমিব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করাসহ গোটা ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন। এ লক্ষ্যে ভূমিসংক্রান্ত যাবতীয় সেবা কার্যক্রমকে এক ছাদের নিচে আনার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে ভূমি সংস্কারের উদ্যোগও। জানা যায়, এ লক্ষ্যে শিগগিরই আইন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২২’ নীতিগত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হবে। প্রস্তাবিত আইনের প্রধান লক্ষ্য কৃষিজমির সুরক্ষা করে ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
এ আইন অনুযায়ী, ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে কেউ ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকানা রাখতে পারবেন না। ক্রয়সূত্রে কারও মালিকানায় এর চেয়ে বেশি জমি থাকলে তা সরকারের কাছে সমর্পণ করতে হবে। তবে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হলে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত কৃষিজমি সংশ্লিষ্ট মৌজামূল্যে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকারের অনুকূলে খাস করে নেওয়া হবে। শিল্পকারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা শিথিল করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া আইনে আবাসন ব্যবসায়ীদের জমি সংযুক্ত করা হয়নি।
আইন প্রণয়নই শেষ কথা নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাই মূল বিষয়। এক জরিপে ভূমি খাতকে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন আইন, নতুন ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দেশে ভূমিসংক্রান্ত সব ধরনের দুর্নীতি, অপরাধ ও অব্যবস্থাপনার অবসান হবে-এটাই প্রত্যাশা।