সয়াবিনের সঙ্গে পরিচয় নেই এমন লোক খুব কমই আছে। পুষ্টিতে ভরপুর এ উপাদানটি আমাদের দেশে তেমন জনপ্রিয় না হলেও ভারতবর্ষে এর ব্যবহার ব্যাপক। এটি স্বাদযুক্ত না হলেও অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কম খরচে আমরা পুষ্টি পেতে পারি। সয়াবিনকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের স্টোরহাউস বলা হয়। কারণ এতে আছে থায়ামিন, নিয়াসিন, ফলিক এসিড ও রাইবোফ্লাভিন। লিভার ও হৃদযন্ত্র ঠিক রাখতে এটা বেশ কার্যকর।
প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে আছে ৪৩ গ্রাম প্রোটিন। যা ডালের চেয়ে বেশি।
সয়াবিনের প্রোটিনে সিস্টাইন ও মেথিওনাইন ছাড়া সব ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড আছে। যা শরীরে নিজ থেকে তৈরি হয় না। এই প্রোটিন প্রাণিজ প্রোটিনের বিকল্প হিসাবে কাজ করে। এ জন্য যারা দুধ হজম করতে পারে না তাদের জন্য সয়ামিল্ক খুবই উপকারী। এটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও জরুরি। সয়াবিনে চর্বি ও শর্করা কম থাকে বলে ওজন কমাতে বেশ ভালো কাজ করে। ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ম্যাগনেশিয়াম আছে ২৮০ মিলিগ্রাম, ২৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭০৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস। যা দাঁত ও হাড়ের জন্য কার্যকর। তবে কিডনি রোগীদের সয়াবিন না খাওয়াই ভালো। সয়ামিল্কে প্ল্যান্ট হরমোন আইসোফ্ল্যাবনস শরীরের ইস্ট্রোজেনের কাজ করে বলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। সয়ামিল্ক দিয়ে তৈরি টাফু ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভালো উৎস।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণিজ প্রোটিনের পরিবর্তে সয়াবিন খেলে প্লাজমা কোলেস্টেরল কম থাকতে দেখা যায়। এদিকে সয়াবিন রক্তে লৌহ শোষণ কমায় বলে প্রতিদিনই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। সয়াবিনে আছে ভিটামিন ই ও লেসিমিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা বার্ধক্যের গতি মন্থর করে। হজমে সাহায্যকারী এনজাইম ট্রিপসিনের কার্যকলাপ কিছুটা ব্যাহত করে বলে সয়াবিন ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। সয়াবিন গাঁজিয়ে তৈরি করা হয় সয়াসস। তবে এটাতে লবণ বেশি থাকে বলে উচ্চরক্ত চাপে না খাওয়াই ভালো। এছাড়া সয়াবিন দিয়ে সয়ানাগেট, সয়াবিস্কুট, বেবিফুডও তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে এর আরও চাষ হওয়া প্রয়োজন। এর আটা গমের আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি বানানো যেতে পারে। অথবা সয়া চাল অথবা সয়াবিন দিয়ে খিচুড়ি করেও খাওয়া যায়।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।