Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeসাহিত্যভালো লিখতে পারলে কেন্দ্র কিংবা প্রান্ত গুরুত্ব বহন করে না: মোশতাক আল...

ভালো লিখতে পারলে কেন্দ্র কিংবা প্রান্ত গুরুত্ব বহন করে না: মোশতাক আল মেহেদী

মোশতাক আল মেহেদী ১৯৫৫ সালের ২০ আগস্ট বরগুনা জেলার আমতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ছিলেন। লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত দীর্ঘদিন ধরে। ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস-সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই তার স্বচ্ছন্দ পদচারণা। আশির দশকের এ সাহিত্যিক একজন বহুমাত্রিক শব্দসৈনিক হিসাবে দক্ষিণাঞ্চলে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার প্রথম লেখা ১৯৭৬ সালে বরিশালের চাঁদের হাটে প্রকাশিত হয়। সেটি ছিল একটি ছড়া। ১৯৯৭ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-সেই কষ্ট নদী জানে, জোড়া লেগে ছিঁড়ে যাই, একাকী একাকার ও নির্বাচিত কবিতা। আরও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, উপন্যাস-ছায়ার পুত্র আলোর মানুষ ও ছড়াগ্রন্থ-ভ্যাবলার কাণ্ড। সাক্ষাৎকার গ্রহণ : জুননু রাইন

আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশ এখনকার পরিবেশে মিলালে কোনো ভিন্নতা চোখে পড়ে? এবং তার ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব?

: আমাদের সময়ে ছিল কাগজের সঙ্গে কলমের ভাবনার যাত্রা, কাটাকুটি। রেখে দেওয়া আবার নতুন কিছুর যোগ বিয়োগ। একটা লেখার সমাপ্তির মাঝে বহুবিধ জার্নির টানাপোড়েন ছিল যা এখন আর দেখি না। কাগজের সঙ্গে কলমের সেই শৈল্পিক সম্ভাবনা যখন স্থির হতো তারপরও কিছু হয়নি বলে একটা অতৃপ্তির খোঁচা থাকত।

প্রযুক্তির এ পুঁজিবাদী সময়ে একজন লেখক তার লেখক সত্ত্বাকে কতটা লালন-পালন করতে পারে?

: মহৎ লেখা নিশ্চয়ই এ পারিপার্শিক ভিন্নতাকে অগ্রাহ্য করে। পুঁজিবাদী আগ্রাসনকে পাশ কাটিয়ে লেখক তার সামাজিক দায়বদ্ধতা লালন করে। এ প্রলোভন একজন লেখককে কৃতদাস বানায়।

লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন?

: সাহিত্যের গোষ্ঠীবদ্ধতা ও প্রচারের লোভে পড়েই আমাদের নতুন লেখকদের মাঝে এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এটা এক ধরনের অসুস্থতা। আমি এটাকে সমর্থন করি না। ভালো লিখতে পারলে কেন্দ্র কিংবা প্রান্ত এগুলো এত গুরুত্ব বহন করে না।

বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে, কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত?

: ইমাজিনেশন এখন শেখরহীন লম্ফনের বার্তাবাহক, লেখালেখিতে মানুষের জীবন সংগ্রাম, বেঁচে থাকার উপাদানও উপায় বাতলে দেওয়া আবশ্যক। খেটে খাওয়া মানুষের জীবন সংগ্রাম সাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপজীব্য। বর্তমানের সাহিত্যে এর বিচ্যুতি আছে।

দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যবান

: মানুষ এখন পুঁজির পূজারি। ভালোবাসা এখন একটি বায়বীয় শব্দ। টাকার কাছে নতজানু এক মানবিক কঙ্কাল!

আমাদের বর্তমান সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান, কতটা বিকৃতির শিকার?

: নিশ্চয়ই বহমান, তবে ক্ষীণ স্বরে এবং ভাসা ভাসা।

প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো কতটা মন্দ?

: মঙ্গল তো বটেই তবে তাকে পরিচালিত হতে হবে দক্ষ হাতে। সাহিত্যে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন, বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে সাহিত্যের আদিকাল সেই চর্যাপদ থেকে মধ্যযুগের শিল্প সাহিত্যের অনেককিছুই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এক ক্লিকেই পেয়ে যেতে পারেন। আবার ই-বুক, ই-পেপারসহ সৃজনশীল বহুকিছুই প্রযুক্তির অবদান। প্রযুক্তির বিকাশের কারণে গেল এক-দেড় দশকে শিল্প সাহিত্যের এ রূপান্তর ঘটেছে। এ কারণে বিশ্ব সাহিত্যের সমকালীন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিকর্মগুলোও আমরা খুব দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া অনলাইন বুক শপগুলোর কারণে সাহিত্যের বিপণনে নতুন একটি দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এ কারণে প্লেজারিজমও বেড়েছে। ফলে মৌলিক লেখাগুলো দূষিত হচ্ছে একদিকে, অন্যদিকে নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে যাচ্ছে।

বরগুনার সাহিত্যচর্চার বর্তমান অবস্থা কেমন? কোন কোন দিকে যত্ন নিলে আরও সক্রিয় হতে পারে?

: বরগুনার বর্তমান সাহিত্যে বৈচিত্র্য, বিস্তৃতি ও গভীরতার কিছুটা অভাব রয়েছে। এ ছাড়া বহুমুখিতারও অভাব রয়েছে বেশ। বরগুনায় কবির সংখ্যা যত বেশি সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে সেই তুলনায় অংশগ্রহণ অনেকখানি কম। ফলে, কবিতার ধারাটা এখানে বেশ সচল বলা গেলেও গদ্যচর্চার ধারাটা সে তুলনায় বেশ বিবর্ণ। সে অভাব দূরীকরণে সাহিত্য স্রষ্টাদের সচেতন এবং আরো দূরদর্শী হওয়া জরুরি। নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা, পর¯পর মতবিনিময় এবং পড়াশোনার প্রতি আরও মনোনিবেশ করার মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন? কেমন হওয়া উচিত?

: রাষ্ট্র তো জনগণের। নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক শক্তিশালী হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments