সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আত্মমর্যাদাশীল, তিনি পছন্দ করেন আত্মমর্যাদাবোধ, উচ্চ চারিত্রিক গুণাবলি এবং অপছন্দ তার পশ্চাৎপদা।’ (মুসনাদে হাকিম : ১/৪৮)
আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) মুমিনের তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, যার দুটি আল্লাহ পছন্দ করেন এবং একটি তিনি অপছন্দ করেন। হাদিস বিশারদরা বলেন, এ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে আত্মমর্যাদাবোধ, উচ্চতর চারিত্রিক গুণাবলি ও সৎসাহসে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং ভীরুতা ও পশ্চাৎপদতার ব্যাপারে নিরুৎসাহ করেছেন।
সৎসাহস কী : মানব মনের অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছাকে সাহস বলা হয়। তা ভালো কাজে হোক বা মন্দ কাজে। তবে সৎসাহস শুধু ইতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হয়। ভালো কাজের প্রবল ইচ্ছা এবং পার্থিব পরিণতি উপেক্ষা করাই সৎসাহস। (তারিফাত, পৃষ্ঠা ৩২০)
আর ইসলামের দৃষ্টিতে সৎসাহস হলো পরকালীন কল্যাণ লাভে মুমিনের অব্যাহত প্রচেষ্টা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিন হয়ে পরকাল কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৯)
আত্মমর্যাদাবোধ মানুষকে সাহসী করে : আল্লামা ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘আত্মমর্যাদাশীল মানুষ শুধু উচ্চতর, উত্তম ও প্রশংসনীয় বিষয়েই সন্তুষ্ট হয়। আর নিচু মনের মানুষ নিম্নবর্গীয় কাজে ও জিনিসে ঘুরপাক খায়। মাছি যেমন ময়লার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে, তেমন তারাও রুচিহীন কাজে নিমগ্ন হয়। আত্মমর্যাদাশীল অবিচার, অশ্লীলতা, চুরি, খেয়ানতে তৃপ্ত হতে পারে না। কেননা সে এর থেকে বহু ঊর্ধ্বে ও সম্মানিত।’ (আল ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ২০৩)
প্রবৃত্তির অনুসরণে হীনম্মন্যতা তৈরি হয় : সত্যপ্রত্যাখ্যান, প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং পার্থিব জীবনের মোহ মানুষের সৎসাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ ধ্বংস করে দেয় এবং দুনিয়ার অন্তহীন চাহিদা মানুষকে হাঁপিয়ে তোলে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ওই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও, যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন, অতঃপর সে তা বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে আর সে বিপদগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের মতো। তার ওপর তুমি বোঝা চাপালেও সে হাঁপাতে থাকে এবং না চাপালেও সে হাঁপায়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭৫-১৭৬)
হাদিসে সৎসাহসের প্রকৃতি : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি দোয়া থেকে সৎসাহসের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। শাদাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি কাজে দৃঢ়তা, সত্যপথে অবিচলতা, আপনার অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা, উত্তমরূপে আপনার ইবাদত, সত্যবাদী জিহ্বা, সুস্থ হৃদয়। আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার জ্ঞাত সব অকল্যাণ থেকে, কামনা করি আপনার জ্ঞাত সব কল্যাণ, ক্ষমা চাই আমার সব পাপ থেকে সে সম্পর্কে আপনি সম্যক অবগত। নিশ্চয়ই আপনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩০৪)
উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সৎসাহস, সাহসিকতার উপাদান, হীনম্মন্যতা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।
হীনম্মন্যতাকে প্রশ্রয় দেয় না মুমিন : হীনম্মন্যতা মানুষের প্রতিভা, যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও সম্ভাবনা ধ্বংস করে দেয়। তাই মুমিন হীনম্মন্যতাকে প্রশ্রয় দেবে না। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলতেন, ‘তোমার সাহসকে ছোট কোরো না। কেননা আমি সাহস হারানো ব্যক্তির চেয়ে অধিক অকর্মণ্য কাউকে দেখিনি।’ (মুহাদারাতুল উদাবা, পৃষ্ঠা ৩৩)
আল্লাহ সবাইকে ভালো কাজে সাহসী করুন। আমিন।