Friday, March 24, 2023
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকভারতে মুসলিমদেরকে গণহত্যার ডাক, নীরব সরকার

ভারতে মুসলিমদেরকে গণহত্যার ডাক, নীরব সরকার

দিল্লিতে হিন্দুদের মিছিল থেকে ফের মুসলিমদের ওপর হামলা

ভারতে মুসলিম গণহত্যার ক্রমবর্ধমান আহ্বানের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার চোখ বন্ধ করে রাখায় হিন্দু উগ্রবাদীরা মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য বিদ্বেষ ছড়ানো ও নতুন নতুন হুমকি দেয়ার মতো সাহস পাচ্ছে।

সে ধারা বজায় রেখে এবার একজন কট্টরপন্থী হিন্দু নেতাকে মুসলমানদের ওপর হুমকি দিতে এবং অজানা কারণে তাদের ভয়ানক পরিণতির জন্য সতর্ক করতে শোনা যায়। উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ গবেষণার অধ্যাপক অশোক সোয়াইন অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওটিতে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘ভারতে একজন হিন্দু ডান ধর্মীয় নেতা প্রকাশ্যে মুসলমানদের গণহত্যার আহ্বান জানাচ্ছেন! ভারত একটি বিপজ্জনক পথে এবং বিশ্ব নীরবতার মধ্যে চলে গেছে।’

‘আচ্ছা আমরা একটি ধর্মযুদ্ধ (বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ) শুরু করেছি এবং আমরা আপনাকে রেহাই দেব না,’ ঐতিহ্যবাহী গেরুয়া পোশাক পরিহিত লোকটিকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি কট্টরপন্থীদের অভিপ্রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি যোগ করেন, ‘এটি তারা (মুসলিম) হবে যারা এটি শুরু করবে কিন্তু আমরাই এটি শেষ করব।’

ভিডিওর শেষের দিকে, অন্য একজনকে বলতে শোনা যায় যে, হিন্দু জাতির চেয়ে ‘মৃত জাতি’ নেই, একটি আপাত ভঙ্গিতে সম্প্রদায়কে অন্যদের বিরুদ্ধে উসকানি দেয়ার জন্য কথাটি বলা হয়। ভিডিওটি তাদের অবস্থানকে বৈধতা দিয়েছে যারা গণহত্যার জন্য ক্রমবর্ধমান আহ্বানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সময়মত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এ মাসের শুরুতে, বিজেপি-আরএসএস-এর অন্তর্গত হিন্দু উগ্রপন্থীরা স্থানীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় রাজস্থানের করৌলি এলাকায় মুসলমানদের ৪০টিরও বেশি বাড়ি ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘সমানই উদ্বেগজনক রাষ্ট্রযন্ত্রের উদাসীনতা যা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যভাবে দেখেছে এবং নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার মৌলিক দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েছে।’

এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতের সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে মুসলিমরা ভয় ও ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পররাষ্ট্র দফতর আরও উল্লেখ করেছে যে, বিজেপি-আরএসএস জোট ঘৃণা ও সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ দ্বারা চিহ্নিত ‘হিন্দুত্ব’ এজেন্ডার অংশ হিসাবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বোধ সহিংসতার অপরাধকে সক্ষম করেছে।

দিল্লিতে হিন্দুদের মিছিল থেকে ফের মুসলিমদের উপর হামলা
এদিকে শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে হিন্দুদের একটি ধর্মীয় মিছিল থেকে স্থানীয় মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি এবং পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, যে হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা চলাকালে পাথর ছোড়া হয়েছিল। এলাকার মুসলিম বাসিন্দারা জানিয়েছেন, হিন্দুরা শোভাযাত্রা করে আসার সময় অশান্তি তৈরি করে। তারাই প্রথম সংঘর্ষ বাধায়। এদিকে আবার হিন্দু বাসিন্দারা দাবি করেছেন, তাদের শোভাযাত্রায় মুসলিমরা পাথর ছুড়ে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করেছিল এবং সেøাগান দিয়ে অশান্তি বাধানোয় উস্কানি দিতে থাকে তারা। আবার অনেকেই দাবি করেছেন বাইরে থেকে কিছু লোক এসে অশান্তি বাধিয়েছে। যদিও এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির শহরতলী জাহাঙ্গীরপুরীতে মিছিল চলাকালীন মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা এখনও বিশৃঙ্খলার উৎস তদন্ত করছে। এর আগে শনিবার নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে সেøাগান দিয়ে বলেছিল যে, মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল শাসিত তিনটি রাজ্যের অংশে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের পর গত সপ্তাহে কর্তৃপক্ষের দ্বারা মুসলমানদের সহিংসভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।

গত রোববার একটি ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন সংঘর্ষ পুলিশকে একটি শহরে কারফিউ জারি করতে এবং রাজ্যের কিছু অংশে চারজনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করতে প্ররোচিত করেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, গত সপ্তাহান্তে হিন্দু উৎসব রাম নবমীর সময় যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল তার পরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মধ্য প্রদেশ রাজ্যে ‘দাঙ্গাকারী’ অভিযোগে মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকান ভেঙে দিয়েছে। মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটেও কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের অস্থায়ী অনেক দোকান ভেঙে দিয়েছে।

বিরোধী রাজনীতিবিদরা মোদির ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টিকে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করার অভিযোগ করেছেন। ধর্মীয় সংঘর্ষের পর ১৩টি বিরোধী দলের নেতারা শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছেন। ‘আমাদের সমাজের মেরুকরণের জন্য শাসক সংস্থার একাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য, পোশাক, বিশ্বাস, উৎসব এবং ভাষা সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে যেভাবে ব্যবহার করছে তাতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত,’ নেতারা বলেছিলেন।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরাসরি কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন। তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, রাজধানীর শান্তি বজায় রাখতে অক্ষম মোদি সরকার। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম ভয়াবহ দাঙ্গায় ৫৩ জন মারা গেছিলেন, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এ ছাড়াও আহত হয়েছিলেন আরও অন্তত ৬১৯ জন। সূত্র : আল-জাজিরা ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments