আশঙ্কা ছিল। তা মিলেও গেল নির্ভুল ভাবে। ৪০ বছর পরে ফের জিডিপির হার শূন্যের নীচে নামল। গত বছরের এই সময়সীমার তুলনায় কমেছে ২৩.৯ শতাংশ। সোমবার বিকেলে ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস (এনএসও)-র তরফে বর্তমান অর্থ বছরের (২০২০-’২১) প্রথম তিন মাস, এপ্রিল থেকে জুনের আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রকাশ করা হয়। তাতে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে ত্রৈমাসিকের হিসেবে জিডিপি হার প্রকাশ শুরু হয়েছিল। গত আড়াই দশকে কখনওই জিডিপি বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে নামেনি। করোনা পরিস্থিতিতে জেরে আর্থিক বৃদ্ধির হার মুখ থুবড়ে পড়ার কারণেই ডিজিপির এই পতন।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের বড় সময়েই লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল ছিল। ফলে জিডিপি-র সঙ্কোচনের এমনকি, আর্থিক বৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে থাকার বিষয়টিরও আঁচ মিলেছিল। মতভেদ ছিল শুধু অর্থনীতির বহর বা জিডিপি-র কতটা সঙ্কোচন হয়েছে, তা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং অর্থ মন্ত্রকের আশা ছিল জিডিপি-র সঙ্কোচন যেন কম হয়। সে ক্ষেত্রে আর্থিক বৃদ্ধির হার পুনরুদ্ধার করা তুলনায় সহজ হতে পারে। কিন্তু সোমবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান সেই আশায় কার্যত জল ঢালল।
২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের গোড়া থেকেই শুরু হয় অধোগতি। বস্তুত, করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই ভারতীয় অর্থনীতিতেও ঝিমুনি চলছিল। অটোমোবাইল, উৎপাদন, পরিষেবা থেকে শুরু করে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঘনিয়ে আসছিল অশনি সঙ্কেত।
২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল ২০১৯-মে ২০১৯) আর্থিক বৃদ্ধি আগের বছরের থেকে নেমে দাঁড়ায় ৫.২ শতাংশে। তার পর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার আরও কমে হয় ৪.৪ এবং ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া তৃতীয় ত্রৈমাসিকে নেমে যায় ৪.১ শতাংশে। আর শেষ ত্রৈমাসিকে (২০২০-র জানুয়ারি-মার্চ) সেই বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছিল প্রায় ৩ শতাংশে।
সামগ্রিক ভাবে ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে নেমে আসে। নিম্নগামীতার নিরিখে যা ছিল গত ১১ বছরের রেকর্ড। শুধু ভারত নয়, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বিশ্বজুড়ে ধাক্কা খেয়েছে আমদানি-রফতানি, কল-কারখানায় উৎপাদন। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে হোটেল, পর্যটন, বিমান, রেস্তরাঁ পরিষেবা ব্যবসা।
ফ্রান্সের জিডিপি নেমেছে প্রায় ১৪, ইটালির ১২.৪, স্পেনের ১৮.৫ এবং ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানির ১০.১ শতাংশ। ১৯টি দেশের ইউরোপীয় অঞ্চল (যাদের মুদ্রা ইউরো) ধরলে তা ১১.৯ শতাংশ। ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি কমেছে ১২ শতাংশের বেশি। ভারতের মতোই আমেরিকাতে জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে প্রাক-করোনাপর্বে জিডিপি ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তা গত অর্থবর্ষের একই সময়সীমার নিরিখে ৩৩.৯ শতাংশ কমেছে।
সূত্র- আনন্দবাজার