Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপে ভোটাধিকার হারিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ: রিজভী

ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপে ভোটাধিকার হারিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ: রিজভী

ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর করতে গিয়ে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের জনগণ হারিয়েছে গণতন্ত্র, বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার। ‘ডামি সরকারে’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ উগান্ডায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নাকি ভারতের সম্পর্ক গভীর থেকে আরো গভীর হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা আংশিক সত্য। সম্পর্ক গভীর হয়েছে তবে সেটি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখে উন্নয়নের দোহাই দিলেও সর্বত্রই নৈরাজ্য। উন্নয়ন হলে দেশে কেন গ্যাস সংকট, বিদ্যুৎ সংকট। উন্নয়ন হলে কি কারণে একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে একটি পরনির্ভরশীল এবং আমদানি নির্ভর দেশে পরিণত করা হয়েছে? বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায়শই একটি কথা বলে থাকেন, সেটি হলো, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত মানুষের ভোটের অধিকার। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সুতরাং, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বারো কোটি ভোটারের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে। উন্নয়নের নামে দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের হোতা আওয়ামী অলিগার্কদের কবল থেকে দেশ মুক্ত করে জনগণের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে ইনশাআল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী দেশকে অনিবার্য ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছেন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেতনার স্তরে সুবিচার বলে কিছুই নেই। তিনি দ্রুত হিংসার প্রয়োগে পারঙ্গম। তিনি গণতন্ত্রকে বিকলাঙ্গ করে এক সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছেন দেড় দশক ধরে। ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পরে তিনি ভয়াবহ একক কর্তৃপক্ষ হয়ে উঠেছেন। স্বৈরশাসকদের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে তিনি দেশকে অনিবার্য ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছেন। স্বৈরতন্ত্রের পতন নিশ্চিত করতে জনগণের ঐতিহাসিক প্রয়াসের দৃষ্টান্ত তিনি স্মরণে আনতে পারছেন না। কোন কালেই নিপীড়ক আওয়ামী সরকার সদিচ্ছাপ্রসূত রাজনৈতিক আচরণ করেনি। ওদের হাতের মুঠোয় ধ্বংসের শক্তি আর ভাষায় বিদ্বেষের শক্তি।

৭ জানুয়ারির জনগণ ভোট প্রত্যাখান করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেক অনুনয়-বিনয় আর স্বৈরাচারী উগ্র প্রতিমূর্তি ধারণ করেও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ জনগণ আগেই টের পেয়েছিল এরা ভোটকেন্দ্রে লোক সমাগম দেখিয়ে সন্ধ্যা বেলায় পূর্ব নির্ধারিত ব্যক্তিদেরকে সংসদ সদস্য হিসেবে নাম ঘোষণা করা হবে। সেটি ভোটের দিন অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে। এরা নির্বাচনকে পচে গলে বিকৃত করেছে। আর এই ধোকাবাজির নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গত তিন/চার মাস ধরে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশবিক নিপীড়ণ নির্যাতন চালানো হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনে অনেকেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কারাহেফাজতে ও রিমান্ডে নির্যাতন পৃথিবীর সকল জালিমশাহীর রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। কারও হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, কারও হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়েছে, কারও চোখের আলো নিভে গেছে পুলিশের ছোঁড়া শট-গানের গুলিতে।

আদালত থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি মিলছে না অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জামিনের কাগজ নিয়ে কারাফটক থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আবারও নতুন মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। আওয়ামী পুলিশ প্রশাসন বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে খেলছে। অবৈধ সরকার যেন নিজেদের টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। জামিনে মুক্তি পেলেও জেলগেটে অপেক্ষমান গোয়েন্দা সংস্থার লোকদেরকে টাকা না দিলে তাদের মুক্তি মিলছে না। অসংখ্য গরীব নেতাকর্মী জেলগেটের টাকা না দেয়ার কারণে কারাগারেই ধুকে ধুকে জীবন কাটাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিএনপি’র বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আওয়ামী সুরক্ষাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

তিনি জেলগেটে অনাচার এবং টাকার বিনিময়ে মুক্তির নিশ্চয়তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দেড় দশক ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা চুষে নেয়ার জন্য। তবে গণতন্ত্র আদায়ে জনগণের অঙ্গীকার কখনোই নিষ্ফল হবে না। রিজভী অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জোর দাবি জানান। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments