Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ভারতীয় ঋণ অনিশ্চিত অন্ধকারে প্রকল্প

ভারতীয় ঋণ অনিশ্চিত অন্ধকারে প্রকল্প

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ। প্রকল্পটি অনুমোদন হয় প্রায় ৬ বছর আগে। প্রথম দফায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল গত বছর জুনে। তবে এর মধ্যে প্রকল্পের মূল কাজ শুরুই হয়নি। এরপর সময় বাড়ানো হয় এক বছর। এখন প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আর মাত্র দেড় মাস। সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত রেলপথের ভূমি অধিগ্রহণই সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া ভারতের তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু ভারত থেকে এখন পর্যন্ত এলওসি ছাড় না হওয়ায় অন্ধকারে রয়েছে প্রকল্পটি। এমনকি এলওসি ছাড়ের বিষয়ে সাত মাস আগে ভারতে চিঠি দেয়া হলেও তার কোনো ফিরতি বার্তা আসেনি রেলওয়ের কাছে।
উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার। এতে সময় বাঁচবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় চলতি বছর জুন মাসে। আর ২০২১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার পর তারা ২০২৩ সালের ৩০শে জুন চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে।

বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ ৮৫ কিলোমিটার ডুয়ালগেজ রেলপথের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত। বাকি ২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে কেবল প্রকল্প কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও কনসালটেন্সি বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে বাড়ানো হবে প্রকল্পের মেয়াদ। একই সঙ্গে প্রকল্প ব্যয় আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, বগুড়ার ছোট বেলাইল  থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজও সম্পূর্ণ হয়নি। এলওসি আওতাভুক্ত হওয়ায় প্রাথমিক ঠিকাদার নির্বাচন ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে করা হবে। তারা ঠিকাদার কোম্পানির সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলে টেন্ডারে যাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এজন্য গত বছর অক্টোবরে সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্য ভারতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এটি প্রক্রিয়াধীন বলেই জানানো হচ্ছে। এদিকে ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়। এতে ঋণের পরিমাণ ও প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে। ঋণ বেড়ে গেলে ভারত সরকারের নীতিগত অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এজন্যও গত অক্টোবরে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। তবে তারও কোনো ফিরতি বার্তা আসেনি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, এই প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে ডিটেইল ডিজাইন সম্পূর্ণ হয়েছে। চলতি বছর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা এখন সম্ভব হবে না। মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে। মেয়াদ বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে। কারণ জমি অধিগ্রহণ করতেও এখন আগের চেয়ে খরচ বেশি হবে। তিনি বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ নতুন রেলপথে মোট ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলো হবে কৃষ্ণদিয়া, চান্দাইপোনা, ছোনকা, শেরপুর, হাড়িয়া বাজার, রায়গঞ্জ ও রানীরহাটে। আর ৫টি জংশন হবে রানীরহাট, সিরাজগঞ্জ স্টেশন, মনসুর আলী স্টেশন, বগুড়া ও কাহালুতে।

এদিকে বগুড়া-সিরাজগঞ্জের মধ্যে দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার। তবে এই অঞ্চলের ট্রেনগুলো সান্তাহার, নাটোর ও পাবনা জেলার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করছে। এতে রাজধানী ঢাকা থেকে বগুড়ায় ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা লাগছে ট্রেনে যেতে। যদিও বাসে লাগে ৭ ঘণ্টা। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন সম্পন্ন হলে ১১২ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। এতে সময়ের পাশাপাশি অর্থও সাশ্রয় হবে উত্তরাঞ্চলের মানুষের। তাই দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই রেলপথ নির্মাণের আশায় রয়েছেন।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ নতুন রেলপথের জন্য দুই জেলার ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। তবে প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তবে এখনো ৪ ধারায় নোটিশ দেয়া হচ্ছে ভূমি মালিকদের। কবে নাগাদ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হবে সেটির নির্দিষ্ট সময় জানা নেই সংশ্লিষ্টদের। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা ৪ ধারায় নোটিশ দিচ্ছি। ৪ ধারার নোটিশ শেষ হলে ভূমি মালিকদের আপত্তি থাকলে তা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপত্তি দিবে। পরে তা শুনানি শেষে নিষ্পত্তি হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দ্রুত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ৪ ধারায় নোটিশ দেয়া হয়েছে। এখন অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে কারও কোনো আপত্তি আছে কিনা সেটা আমরা শুনবো। তারপর ৫ ধারা নোটিশ ইস্যু করা হবে। আমাদের কাজ চলছে। ফিল্ড ভিজিট চলছে। মৌজা অনুযায়ী ফিল্ড বুক তৈরি হচ্ছে। ৫৬টা মৌজার মধ্যে ১৪ মৌজা হয়েছে। বাকিগুলো হলে ৫ ধারায় চলে যাবো।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments