শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম সংস্কারক আলেম ও সুফিসাধক। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) তাঁকে হিজরি পঞ্চম শতকের অন্যতম মুজাদ্দিদ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে পূর্ণতা লাভের পর তিনি শিক্ষা, সংস্কার ও সংশোধনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। একই সময়ে তিনি দরস প্রদান ও ধর্মোপদেশমূলক কাজের প্রতি মনোযোগী হন। …তাঁর ওয়াজ শুনতে গোটা বাগদাদ যেন ভেঙে পড়ত! আল্লাহপাক তাঁকে এমন প্রভাবমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তা দান করেছিলেন, যা বড় বড় রাজা-বাদশাহর ভাগ্যে জোটেনি।
’ (সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস : ১/২০৫)
অন্যান্য মুসলিম মনীষী থেকে শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর ভিন্নতা এখানে যে আল্লাহ তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কাজের প্রভাব এখনো অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তাঁর প্রদর্শিত পথে লাখো মানুষ এখনো আল্লাহর পরিচয় ও সান্নিধ্য লাভ করছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এই মহান মনীষীর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্য অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। একদল তাঁকে এমন সব কথা ও কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন, যা ঈমান ও ইসলামের মূলনীতির পরিপন্থী। বিপরীতে একদল মানুষ কোনো প্রকার অনুসন্ধান ছাড়াই তাঁর মর্যাদা, অবদান ও কীর্তিগুলো অস্বীকার করে বসে। উল্লিখিত দুই শ্রেণি থেকে পৃথক একটি দল এমন আছেন, যারা গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে মানুষের সামনে সত্য ও সঠিক তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন। হিজরি নবম শতকের মুহাক্কিক আলেম, ফকিহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) তাদের একজন। তিনি ‘গিবতাতুন নাজির ফি তারজামাতি শায়খ আবদুল কাদির’ নামে একটি অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন।
ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) রচিত গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য হলো এটি সূত্রনির্ভর, অতিরঞ্জন ও অবিচার মুক্ত এবং সঙ্গে সংক্ষিপ্ত। মোট ৯টি অধ্যায়ে তিনি শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর জীবন ও অবদানকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি জীবনী রচনার প্রথাগত ধারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সন-তারিখের বিবরণের পরিবর্তে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেছেন। যেমন পারিবারের বর্ণনায় তিনি বংশধারার চেয়ে বংশীয় মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মাত্র ১১২ পৃষ্ঠার বইয়ে ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর জন্ম, পরিবার, দৈহিক বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা, সমকালীন পরিবেশ, জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক সাধনা, ফিকহ-হাদিস-তাসাউফে তাঁর মর্যাদাশীল অবস্থান, মুসলিম উম্মাহর সেবা, ওয়াজ, পাঠদান, আধ্যাত্মিক দীক্ষা এবং তাঁর ব্যাপারে মনীষীদের মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া তাসাউফ, তাজকিয়া ও তরিকা বিষয়ক জ্ঞানগর্ভ দালিলিক আলোচনাও আছে। মূল্যবান এই বইয়ের ভাষান্তর করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও কবি মুহাম্মদ ফরিদুদ্দিন ফারুক। বইটি বাজারে এনেছে রুচিশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গলুই।
গ্রন্থনা : কাসেম শরীফ