দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বললেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অনুরোধ করিনি। মধ্যস্থতার কোনো প্রস্তাবও দেইনি।’ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে কথা হয়েছে স্বীকার করে মোমেন বলেন, কথার ছলে আমি তাকে বলেছি ‘আপনি চাইলে তাদের নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে পারেন।’ এটা আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব বা অনুরোধ নয়। ওয়াশিংটন সফর শেষে মন্ত্রী কালই অফিস করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে তিনি জাপান, সিঙ্গাপুর এবং পালাউয়ে প্রায় সপ্তাহব্যাপী সফর করেন। সবক’টি সফর ফলপ্রসূ হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, যেখানেই গিয়েছি খুব সম্মান পেয়েছি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরানো এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, নির্বাচনে আমরা সব দলকেই চাই। সব দল মোটামুটি আসে কিন্তু একটা বড় দল আছে যারা পাবলিকলি বলে, আমরা নির্বাচন করবো না। কেউ যদি ইচ্ছে করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে চায়, তাহলে আমাদের কি করার আছে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, বিএনপি জনগণকে ভয় পায়।কারণ তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসেনি। বিএনপি’র জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। তারা ওই ধরনের জিনিসই (অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া) আশা করে। এ জন্য তাদের আমরা আনতে পারি না। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-কেন আনতে পারেন না? তখন আমি বললাম, আপনি তাদের নিয়ে আসেন। দেখেন আপনি পারেন কিনা? বাকি সব দল আসে। তারা যদি না আসে, আমরা কী করবো। উনি বললেন, না আসলে আপনারা তো কিছু করতে পারেন না। ড. মোমেন বলেন, আমি বললাম, আমাদের দেশের গণতন্ত্র খুব ট্রান্সপারেন্ট। আমাদের দেশটা সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য। বাংলাদেশের প্রত্যেক লোক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এ জন্য শতকরা ৭২ ভাগের নিচে কোথাও ভোট হয় না। ভোটের রেসপন্স বেশি। এটা উৎসব। আপনার দেশের মতো না, জোর করে লোক নিতে হয়, কেউ আসে না। আমাদের গণতন্ত্র অন্যদের শেখানো লাগবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ব্লিনকেনকে ব্রিফ করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি বলেছি, আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। আবার নতুন করে আমরা ইসি গঠন করেছি। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য লোকদের নিয়ে আসা হয়েছে। স্বচ্ছ লোকেরা কমিশনে স্থান পেয়েছেন। আলোচনাকালে মন্ত্রী মোমেন নিজের নির্বাচনী এলাকার রাজনৈতিক অবস্থাও তুলে ধরেন। বলেন, আপনার রাষ্ট্রদূত আমার এলাকার নির্বাচন দেখেছে। কোথাও কারচুপির অভিযোগ পাননি। তাছাড়া আমি আওয়ামী লীগের, আর আমার মেয়র বিএনপি’র। আমাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে। গত ৪ঠা এপ্রিল ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মন্ত্রী মোমেন। হোটেলে ফিরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি নিজেই এটি প্রকাশ করেন। তার বক্তব্যের অডিও ক্লিপ ধরে দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরনা দেয়ার খবরটি চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে দেশে ফিরে কালবিলম্ব না করেই মন্ত্রী কোন প্রেক্ষাপটে কথাটি বলেছিলেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন।