Thursday, June 8, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, কাদের স্বার্থে চলছে এ অবৈধ যান?

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, কাদের স্বার্থে চলছে এ অবৈধ যান?

বুধবার মারিয়া ও ফাইজা নামের দুই শিশু রাজধানীর জুরাইনের আশরাফ মাস্টার হাইস্কুলের সামনের রাস্তা পার হচ্ছিল।

এ সময় বেপরোয়া গতির একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তাদের চাপা দেয়। এতে আহত হয় দুজনই। গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মারিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অটোরিকশাটি আটক করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। রাস্তা বন্ধ করে তারা বিক্ষোভ করেন।

মারিয়ার মৃত্যুর পর ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ যান। অথচ এসব যান চলাচল বন্ধে নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের। তা সত্ত্বেও অলিগলি থেকে শুরু করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কে চলছে এ যানবাহন। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, এর ২০ শতাংশই ঘটে ব্যাটারিচালিত রিকশা দ্বারা। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব অবৈধ যান চলছে কীভাবে? অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব যান বন্ধ না হওয়ার পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

এ সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে স্থানীয় নেতা, চাঁদাবাজ, এমনকি পুলিশও। ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা বলছেন, তারা নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে একটি করে টোকেন নিচ্ছেন, এরপর নির্বিঘ্নে চালাচ্ছেন তাদের অবৈধ যান। প্রতিমাসে টোকেন বাবদ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

বিনিময়ে ‘সেভেন স্টার’, ‘ম’, ‘শাপলা’, ‘কদম ফুল’, ‘ধানের শীষ’, ‘নৌকা’ ইত্যাদি সাংকেতিক চিহ্নসংবলিত টোকেন ধরিয়ে দেওয়া হয় তাদের। এই অনিয়মের পেছনে যে পুলিশ জড়িত, এর প্রমাণ পাওয়া যায় তখন, যখন টোকেন দেখাতে পারলে পুলিশ কিছুই বলে না, আর টোকেন না থাকলে জব্দ করে নিয়ে যায় রিকশা। একেকটি রিকশা ছাড়িয়ে আনতে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়।

আমাদের কথা হলো, যেসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, সেগুলো কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা প্রশাসনের অচেনা? নিশ্চয়ই না। যে বা যারা টাকার বিনিময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালককে টোকেন দেয়, তারা যদি চিহ্নিত হয়ে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?

দ্বিতীয় কথা, হাইকোর্টের নির্দেশনা যে উপেক্ষিত হচ্ছে, তা কি সরকারি মহল দেখছে না? বস্তুত ব্যাটারিচালিত রিকশাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি তথা অবৈধ অর্থের এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এই নেটওয়ার্ক ভাঙতে হবে অবশ্যই। আমরা রাজধানীতে আর ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখতে চাই না। শুনতে চাই না আর কোনো মারিয়ার মৃত্যুসংবাদ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments