Thursday, September 28, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন বৃদ্ধি: জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি

ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন বৃদ্ধি: জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি

ব্যাংক থেকে ব্যাপক হারে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। ব্যাংক থেকে নগদ উত্তোলনের পরিমাণ ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে এটিকে স্বাভাবিক প্রবণতা বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। টাকা তোলার প্রবণতা এর চেয়ে বেশি হলেই তা অস্বাভাবিক হয়ে যায়, যেমনটি হয়েছে ২০২০ ও ২০২২ সালে।

২০২০ সালে করোনার কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের মতে, কোনো মহামারি বা অনিশ্চয়তা বা দুর্যোগ দেখা দিলে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজেদের হাতে রাখার একটি প্রবণতা রয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে এ বছরের এপ্রিলে মানুষের মধ্যে টাকা তোলার প্রবণতা বেড়ে যায়। ওই মাসে গ্রাহকদের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি, যা গত জুনে সামান্য কমে ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটিতে দাঁড়ায়।

তবে জুলাইয়ে আবার টাকা তোলার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায়। আগস্টে এ হার অপরিবর্তিত থাকে এবং সেপ্টেম্বরে তা কিছুটা হ্রাস পায়। তবে গত অক্টোবরে আবারও তা বেড়ে যায়। এ সময় ব্যাংক খাত নিয়ে বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংকে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও তারল্য সংকটের তথ্য প্রকাশিত হলে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নেন, যা নভেম্বরে আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায় আর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তা আরও বেড়ে আড়াই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। শতকরা হিসাবে এটি প্রায় ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে অবশ্য ব্যাংক থেকে টাকা তোলার প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়।

আশঙ্কাজনক হলো, ইতঃপূর্বে গ্রাহকরা কখনোই এত টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিজেদের হাতে রাখতেন না; বরং ব্যাংকেই বেশি টাকা রাখতেন। টাকা হাতে রাখায় গ্রাহকরা কোনো মুনাফা পাচ্ছেন না; উপরন্তু বাড়ছে নানামুখী ঝুঁকি। গ্রাহকদের হাতে থাকা টাকা যে অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখতে পারছে না, তা বলাই বাহুল্য।

অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতির আকার যত বাড়বে, মানুষের চাহিদাও তত বাড়বে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনগণের হাতে থাকা টাকার পরিমাণও বাড়বে। তবে বর্তমানে যেভাবে বাড়ছে, তা মোটেই স্বাভাবিক নয়। যদি এ সত্য মেনে নেওয়া হয়-টাকার অবমূল্যায়ন ও পণ্যমূল্য বাড়ায় মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সংসারের ব্যয় মেটাচ্ছে, তবে এসব টাকার একটি অংশ পুনরায় চক্রাকারে ঘুরেফিরে ব্যাংকেই ফেরত আসার কথা থাকলেও তা আসছে না কেন-এটাই প্রশ্ন।

মূলত এক ধরনের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নানা গুজব ও সুশাসনের অভাবে গ্রাহকরা ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। তাছাড়া মূল্যস্ফীতির চেয়ে আমানতের সুদের হার অর্ধেক কম। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নানা ধরনের ফি ও কর কেটে রাখে। এসব কারণে ব্যাংকে টাকা রাখলে তা নেতিবাচক হয়ে যায়। এ কারণেও অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখতে চাচ্ছেন না।

মনে রাখা দরকার, টাকা গ্রাহকের হাতে থাকলে তা দেশের অর্থনীতিতে কোনো কাজে আসবে না আর ব্যাংকে থাকলে তা অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে সহায়ক হবে। কাজেই জনগণের হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। আর এজন্য ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments