Saturday, April 1, 2023
spot_img
Homeবিচিত্রবোরখা পরেই খাবার ডেলিভারি! আসলে কেন প্রশংসিত হচ্ছেন রিজওয়ানা?

বোরখা পরেই খাবার ডেলিভারি! আসলে কেন প্রশংসিত হচ্ছেন রিজওয়ানা?

আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ একটি ছবি। আর সে ছবিই নেটদুনিয়ায় জাগিয়ে তুলেছে কৌতূহল। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, বোরখা পরেই খাবার ডেলিভারি করতে বেরিয়েছেন এক মহিলা। কেননা তার পিঠে আছে ভারতের জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি সংস্থার একটি ব্যাগ। সচরাচর এমন ছবি তেমন দেখা যায় না। তাই বোরখা পরে ফুড ডেলিভারি করতে বেরনো ওই মহিলাকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় নেটদুনিয়ায়। আর তার ফলেই জানা যায় নেপথ্যের ঘটনা।

সাধারণত এই সংস্থার ডেলিভারি বয়রা একটি নির্দিষ্ট পোশাক পরেই ডেলিভারি করতে বেরোন। আর এমন ব্যাগ মূলত তাদের পিঠেই দেখা যায়। তাই এই বোরখা পড়া মহিলাকে এমন ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যেতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছেন নেটিজেনরা। অনেকেই নিজেদের মতো করে সেই ছবির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ ধরেই নিয়েছেন এই মহিলাও ডেলিভারি করতেই বেরিয়েছেন। তাদের মনে হয়েছে, সাইকেল বা বাইক না থেকে তিনি পায়ে হেঁটেই খাবার ডেলিভারি করছেন। তাই তার এই কঠোর পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বেশ কিছু নেট নাগরিক।

তবে আসল ঘটনা খানিকটা অন্যরকম। ওই কথায় আছে না, ‘ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার’! এক্ষেত্রেও কিছুটা সেরকমই হয়েছে। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার কিছুদিন পর বাস্তবে এই মহিলার দেখা পান এক ব্যক্তি। তিনিই মহিলাকে তার ভাইরাল হওয়া ছবি ও অসংখ্য মানুষের শুভেচ্ছাবার্তা দেখান। তারপরই সামনে আসে আসল সত্যি। এসব দেখার পর ওই মহিলা জানান, তিনি আদৌ কোনও খাবার ডেলিভারি সংস্থার কর্মী নন। কাজের সুবিধার জন্য এক পুরনো জিনিসের দোকান থেকে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে এই ব্যাগটি কিনেছেন। আর কাজের সুবাদে ওই ব্যাগ নিয়েই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয় তাকে।

সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজের জীবন সংগ্রামের গল্প শুনিয়েছেন বছর ৪০-এর রিজওয়ানা। জানা গিয়েছে, লখনউ শহরের জনতা নগর কলোনিতে তিন সন্তানকে নিয়ে তার বাস। কয়েক বছর আগে অভাবের তাড়নায় তার স্বামী হঠাৎ করে পরিবার ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকেই রোজগারের জন্য পথে নামতে বাধ্য হন রিজওয়ানা। বর্তমানে তিনি সারাদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি দুপুর গড়ালে দৈনন্দিন ব্যবহারের কিছু সামগ্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন রিজওয়ানা। তার মতে কেবলমাত্র পরিচারিকার কাজ করে তিন সন্তানের লালন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তাই এই বিকল্প রোজগারের পথ বেছে তিনি। এর জন্য প্রতিদিন পাইকারি বাজার থেকে কিছুটা কমদামে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনেন তিনি। তারপর ব্যাগে ভরে সেই জিনিস বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। তার মতে এই কাজের দরুন তাকে রোজই প্রায় ২০-২৫ কিমি পায়ে হেঁটে ঘুরতে হয়।

আসল ঘটনা যাই হোক না কেন, নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় কিছুটা আর্থিক সুবিধাও হয়েছে রিজওয়ানার। তার এই জীবন সংগ্রামের কাহিনি শোনার পর অনেকেই তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে রিজওয়ানার একমাত্র লক্ষ্য নিজের সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই তাদের পড়াশোনার কোনও খামতি রাখতে চান না তিনি। প্রয়োজনে তাকে যত কষ্টই করতে হোক, হাসিমুখেই তা করতে রাজি বলে জানিয়েছেন এই ‘লড়াকু মা’। সূত্র: ইন্ডিয়াটাইমস।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments