Sunday, October 1, 2023
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবেবিটিউবে শিশুর নিরাপদ বিনোদন

বেবিটিউবে শিশুর নিরাপদ বিনোদন

‘বেবিটিউব’ অ্যাপের নির্মাতা শামীম আশরাফ মূলত একজন তরুণ উদ্যোক্তা। চাকরিও করেছেন কিছুদিন। কিন্তু তাঁর ভাবনা ছিল, নিজ থেকে কিছু একটা করবেন। সেই সূত্র ধরেই ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর যাত্রা করে বেবিটিউব।

বেবিটিউবের মূল পরিকল্পনাকারী তিনি হলেও তাঁর বন্ধু সাজ্জাদুল ইসলাম দেখেন প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো। তিনি ছাড়াও শুরু থেকে শামীমের সঙ্গে আরো আছেন রাফিন, মাইনুল, আবির, রবিউল ও পান্থ। তাঁরা সবাই তাঁর বন্ধু। শামীম ২০১৯ সালে এমএসএস সম্পূর্ণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, রিপোর্টিং, শুদ্ধ উচ্চারণ, কমিউনিকেশনস, টেকনোলজি বিষয়েও দক্ষতা রয়েছে তাঁর। তিনি এসব বিষয়ে দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থার কর্মশালায় অংশগ্রহণও করেছেন। শিশু-কিশোরদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মেন্টর মশাই’। এই সংগঠনের হয়েও তিনি শিশুদের জন্য কাজ করেছেন।

কী আছে বেবিটিউবে

বেবিটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ। যে কেউ গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাইনলোড করতে পারবে। শিশু-কিশোর, অভিভাবকদের নিয়ে গবেষণা করেছেন শামীম আশরাফ। তিনি দেখেছেন, আসলে তাঁরা কেমন ভিডিও দেখছেন বা দেখতে চান। সেভাবেই তিনি বেবিটিউবকে সাজিয়েছেন। বেবিটিউবে এরই মধ্যে দুই হাজারের অধিক ভিডিও কনটেন্ট রয়েছে। খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, চলচ্চিত্র, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোরনির্ভর সব ধরনের কনটেন্ট এখানে রয়েছে।

বেবিটিউবেও আছে আয়ের সুযোগ

ইউটিউবে যেমন ভিডিও কনটেন্ট থেকে আয় করা যায়, তেমনি বেবিটিউবে আপলোড করা কনটেন্ট থেকেও আয় করার সুযোগ আছে। তবে কনটেন্টগুলো অবশ্যই হতে হবে শিশু-কিশোরদের উপযোগী। আর কিছু সহজ শর্ত পূরণ করে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা করতে পারবেন আয়।

আছে ওয়েবসাইটও

অ্যাপের পাশাপাশি আছে বেবিটিউবের ওয়েবসাইটও। বয়সভেদে যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন কোনো কনটেন্ট আপলোড করা যাবে না। বেবিটিউবের টেকনিক্যাল টিম রয়েছে, যারা এই বিষয়টি দেখভাল করে থাকে।

সচেতনতায় ক্যাম্পেইন

চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকার মোট ছয়টি স্কুলে বেবিটিউব ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য শিশুদের সচেতন করা। যেন তারা ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে। তাদের বোঝানো হয়, যদি ইউটিউব ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে কিভাবে নিজেকে সুরক্ষা করবে। এ ছাড়া তিনটি সেমিনারেরও আয়োজন করেছে বেবিটিউব।

অর্জন কম নয়

শামীম জানান, এখন অবধি অ্যাপটি ৩০ হাজারেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। চ্যানেল খুলেছেন তিন হাজার ৫৫৮ জন। ভিডিও কনটেন্ট আপলোড হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে বেবিটিউব টিমই আপলোড করেছে ৫০০টির মতো কনটেন্ট। ভিডিও কনটেন্ট ভিউয়ের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ, রিচ হয়েছে ২০ লাখের মতো বলে শামীম জানান। শামীম আরো জানান, বাংলাদেশে শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রথম ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ বেবিটিউব। তাঁর টিমে সারা দেশে অ্যাম্বাসাডরসহ আছেন মোট ৭৫ জন। তবে ঢাকায় মূল টিমে কাজ করছেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে সবাই বয়সে তরুণ। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁরা বেবিটিউবে কাজ করে থাকেন।

বেবিটিউবে বেবিরাও খুশি

রেনেসাঁ হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইশরাক ফাহান। সে বেবিটিউব ব্যবহার করে দারুণ খুশি। তার মুখেই শোনা গেল, ‘বেবিটিউব আমার কাছে খুব ভালো লাগে। কিছুদিন ধরে বেবিটিউব দেখছি। ’ ‘আমাদের জন্য বেবিটিউব খুব ভালো। সুন্দর সুন্দর ভিডিও আছে এখানে’—কথাগুলো আবদাল রাদি জিলহানের। সে শামসুল হক খান স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

বেবিরা যখন কনন্টেট ক্রিয়েটর

কনন্টেট তৈরি এবং চ্যানেল খুলে সেটা আপলোড— দুটিই বেবিটিউবে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও করতে পারে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মুশফিকুর রহিম। ছোট কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের মধ্যে সে একজন। মুশফিকুর রহিম বলল, ‘বেবিটিউবে ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েট করি। এখানে খুব সহজেই ভিডিও আপলোড করা যায়। আমার খুব ভালো লাগছে যে আমি শিশুদের জন্য একটা প্ল্যাটফরম পেয়েছি, যেখানে ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করতে পারি। ’

খুশি অভিভাবকরাও

বেবিটিউবে খুশি অভিভাবকরাও। সে রকমটাই জানা গেল সংবাদ উপস্থাপক রিজিওয়ানা ইলভিসের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি। সন্তানরা কী দেখছে ইন্টারনেটে। তারা মোবাইল বা ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া থাকতে চাচ্ছে না। নিজেরাও ব্যস্ত থাকি কাজে। সব সময় তাদের মনিটরও করা যাচ্ছে না। ইউটিউবে বা অন্যান্য অ্যাপে ভালো ভিডিও দেখার পাশাপাশি খারাপ ভিডিও আছে। যেগুলো আমার সন্তানদের জন্য হুমকি। যখন বেবিটিউবে দেখেছি, তখন খুব ভালো লেগেছে। সব সময় আমার সন্তানকে বেবিটিউব দেখতে দিচ্ছি। আমার ছেলেও ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করছে। ’

অন্যরা যা বলেন

বেবিটিউব অল্পদিনে সব মহলের প্রশংসা পেয়েছে। তাদের এই কাজকে গুণীজনরা মহৎ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের কথা চিন্তা করে এই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেবিটিউব টিমের কাজগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়। অন্যদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘বেবিটিউব বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীর জন্য একটি শিক্ষামূলক বিনোদনের প্ল্যাটফরম হবে। তাদের কাজে আমি মুগ্ধ। ’

প্রয়োজন সহযোগিতা

বেবিঅ্যাপ বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করছে। তেমনটাই শামীম আশরাফ বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি, তথ্যসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। যেগুলোর দ্বারা তাঁরা সহযোগিতা পেতে পারেন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তারাও বেবিটিউবকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারে। আমাদের ওয়েবসাইটেও বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ’

ডাউনলোড লিংক

বেবিঅ্যাপের সাইজ ৩৩ মেগাবাইট।

https://urlzs.com/qYatF (অ্যানড্রয়েড)

https://www.facebook.com/BabyTubeOfficial/ (ফেসবুক পেজ)

https://baby-tube.com/ (ওয়েবসাইট)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments