দোষীদের শাস্তির আওতায় আনুন
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চার মেগা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ অনভিপ্রেত। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার নির্মাণ, বিদ্যমান এক্সপোর্ট কার্গোর উত্তরাংশের অ্যাপ্রোন সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় পর্যায়), কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ এবং সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলে প্রকল্পে পছন্দের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে বেবিচকের একটি সিন্ডিকেট অন্তত ১০০ কোটি টাকা লোপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আশার কথা, এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংস্থা (দুদক) তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে বেবিচক থেকে উক্ত চার প্রকল্পের যাবতীয় ফাইল ও ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের নাম-ঠিকানা, কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন, সমাপনী প্রতিবেদন ও বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিশোধিত বিলের পরিমাণ ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। উল্লিখিত চার প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরগুলোর চেহারা পালটে যাওয়ার কথা। কাজেই এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বরদাশত করা উচিত নয় বলে মনে করি আমরা।
ইতঃপূর্বে বেবিচকে গেড়ে বসা দুর্নীতি উৎপাটনের উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিল। তবে দুর্নীতিবাজ চক্রের হাত থেকে সংস্থাটির যে মুক্তি ঘটেনি; আলোচ্য চার মেগা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির ও অর্থ লোপাটের ঘটনায় তা পরিস্ফুট হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সম্ভাবনাময় এ সংস্থাটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে মূলত এখানে চলমান বল্গাহীন দুর্নীতির কারণেই। আধুনিক কৌশল প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করার মধ্য দিয়ে অর্থ ও সুনাম অর্জনের কাজটি সহজসাধ্য হলেও বর্তমানে বেবিচক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে কেন হিমশিম খাচ্ছে, এর সদুত্তর খোঁজা জরুরি। হতাশাজনক হলো, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি সত্ত্বেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। বস্তুত এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর চার প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি করার দুঃসাহস দেখানো হয়েছে, যার মূলোৎপাটন জরুরি। উদ্বেগজনক হলো, বেবিচকের প্রায় প্রতিটি শাখায় দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বছরের পর বছর ধরে নানারকম কারসাজি ও ফন্দি-ফিকিরের মাধ্যমে প্রায় প্রকাশ্যে সিন্ডিকেট গঠন করে সংস্থাটিতে কমিশন ও নিয়োগবাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধ চালানো হচ্ছে, যা অগ্রহণযোগ্য।
বেবিচককে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রথম শর্ত হলো-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি অনিয়ম-দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা। এটি করা গেলে অবস্থার পরিবর্তন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ কাজে দুদকসহ সবাইকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। তবে শুধু বেবিচক নয়, সব ধরনের দুর্নীতির অপবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করতে সরকারকে অবশ্যই আন্তরিক ও আপসহীন হতে হবে। সরকার যদি বিরাজমান দুর্নীতি-অনিয়ম ও অরাজক পরিস্থিতি পরিবর্তনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেয়, তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর চার মেগা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারি কোষাগারের অর্থ লোপাটকারীদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি বেবিচককে পরিচ্ছন্ন ও লাভজনক সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।