পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মানবজাতিকে পার্থিব জীবনের ব্যাপারে নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তাতে যেমন পৃথিবীর সহায়-সম্পদের প্রয়োজনীয়তার স্বীকার করা হয়েছে, তেমনি পার্থিব জীবনের চাকচিক্যের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এ জন্য পূর্বসূরি বুজুর্গ আলেমরা পৃথিবীর ব্যাপারে অত্যন্ত নির্মোহ ও সতর্ক ছিলেন।
কোরআন-হাদিসের সতর্কবাণী : পার্থিব জীবনের মোহ সম্পর্কে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, নিশ্চয়ই আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য।
সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে। ’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৫)
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি আমার পরে তোমাদের জন্য যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো দুনিয়ার চাকচিক্য ও তার সৌর্ন্দয, যা তোমাদের ওপর উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৬৫)
বুজুর্গদের চোখে পার্থিব জীবন : কোরআন-হাদিসের নির্দেশনার কারণে বুজুর্গরা পৃথিবীর ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন এবং অন্যকেও সতর্ক করতেন। নিম্নে তাদের কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হলো।
১. অসম্মানের কারণ : ইবনে হানাফি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার নিজের ওপর তার প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দেবে, সে দুনিয়াতে অপমানিত হবে। ’ (ইকদুল ফারিদ, ৪/২৫৬)
২. শান্তির জায়গা নয় : আলী (রা.)-কে বলা হলো, আমাদের দুনিয়ার পরিচয় বলে দিন? তিনি বলেন, আমি দুনিয়ার কী বৈশিষ্ট্য বলব? তার শুরু হয় কষ্ট-ক্লেশ দিয়ে এবং শেষ হয় ধ্বংসের মধ্য দিয়ে। তার হালালগুলো হিসাবযোগ্য, আর হারামগুলো শাস্তিযোগ্য। যে ব্যক্তি তাতে সম্পদশালী হয় সে প্রলুব্ধ হয়, আর যারা দরিদ্র হয় তারা চিন্তাযুক্ত হয়। ’ (তাসাললিয়াতুল মাসয়িব : ১/৩১১)
৩. পরিত্যাগ করলেই প্রশান্তি : ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘দুনিয়া হলো চরিত্রহীন স্ত্রীর মতো যে একজন স্বামীর সহচর্যে সন্তুষ্ট থাকে না। নিশ্চয়ই সে বহু স্বামীকে তার সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সুতরাং তুমি শুধু তা পরিত্যাগ করো, তবেই খুশি থাকবে। ’ (আল ফাওয়ায়িদ : ১/৪৩)
তিনি আরো বলেন, ‘দুনিয়া তার দিকে তোমার কদমগুলোকে তার সমগতিতে অগ্রসর হতে দেয় না। সুতরাং তুমি কিভাবে তার পেছনে দৌড়াবে। ’ (আল ফাওয়ায়িদ : ১/৮)
৪. পরকালের পথে অন্তরায় : ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘বান্দার দুনিয়ার প্রতি আকাঙ্ক্ষা ও সন্তুষ্টির পরিমাণানুসারে মহান আল্লাহর আনুগত্যে ও আখিরাতের কাজে তার অলসতা সৃষ্টি হয়। সুতরাং দুনিয়াকে পরিত্যাগ কোরো তার অনুসারীদের জন্য, যেরূপ তারা (দুনিয়াদাররা) আখিরাতকে পরিত্যাগ করেছে তার অনুসারীবৃন্দের জন্য। ’ (আল ফাওয়ায়িদ, ১/১০০)
৫. ধ্বংসের কারণ : হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার দ্বিনের ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে প্রকৃত একজন প্রতিদ্বন্দ্বী বানায়। আর যে তোমার দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে প্রকৃতার্থে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। (ইহয়াউ উলুমুদ্দিন : ৩/২০৭)