Saturday, December 9, 2023
spot_img
Homeধর্মবিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা দৈনিক দ্য মুসলমান

বিশ্বের একমাত্র হাতে লেখা দৈনিক দ্য মুসলমান

তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় যখন প্রিন্ট পত্রিকার পরিধি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে, তখনো হাতে লেখা পত্রিকা দিব্যি টিকে আছে ভারতের দ্য মুসলমান। চেন্নাই থেকে প্রকাশিত উর্দু ভাষার প্রাচীনতম এই পত্রিকাটি এরই মধ্যে তার ৯৪ বছর অতিক্রম করেছে। ভারতে উর্দু সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ সাইয়েদ আজমাতুল্লাহ ১৯২৭ সালে দ্য মুসলমান প্রতিষ্ঠা করেন। উর্দুভাষী মুসলিমদের জাগরণের লক্ষ্যে এবং মুসলিম সমাজের মুখপত্র হিসেবে তিনি পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। দ্য মুসলমানের নামলিপির ওপর পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি লেখা আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা! তোমরা উপদেশ গ্রহণ কোরো।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ২)

উল্লিখিত আয়াত থেকেই সাইয়েদ আজমাতুল্লাহর জাগরণ প্রত্যাশার প্রকাশ পায়। তাঁর মৃত্যুর পর পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব লাভ করেন ছেলে সাইয়েদ ফাজলুল্লাহ। ২০০৮ সালে সাইয়েদ ফাজলুল্লাহর মৃত্যু হলে পত্রিকার দায়িত্ব লাভ করেন আজমাতুল্লাহর নাতি সাইয়েদ আরিফুল্লাহ। যুবক আরিফুল্লাহ দাদার হাতে প্রতিষ্ঠিত ও পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ দ্য মুসলমানকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। মুসলিম সমাজের মুখপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও দ্য মুসলমানের গ্রাহকদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উর্দুভাষী অমুসলিম। হাতে লেখা চার পৃষ্ঠা পত্রিকার গ্রাহকসংখ্যা ২১ হাজার। ভারতের যেকোনো স্থান থেকে পত্রিকাটি সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কপি পত্রিকার মূল্য ৭৫ পয়সা। বার্ষিক ফি ৪০০ ভারতীয় রুপি। গ্রাহক হতে হলে দৈনিক দ্য মুসলমানের অফিসের ঠিকানায় গ্রাহককে চেক পাঠাতে হয়। করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যে বন্ধ হয়নি পত্রিকার কাজ। তবে এখন বেশির ভাগ গ্রাহকের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পত্রিকা পৌঁছানো হয়।

প্রতিষ্ঠার ৯৪ বছর পার করলেও অফিস ও আয়োজনে ‘শ্রী’ বৃদ্ধি হয়নি দ্য মুসলমান পত্রিকার। চেন্নাইয়ের মাত্র ৮০০ বর্গফুটের অফিসে কাজ করেন তিনজন রিপোর্টার ও তিনজন কাতিব (লিপিকার)। প্রধান লিপিকার রহমান হুসাইনির সঙ্গে লিপিকার হিসেবে আরো কাজ করেন শাবানা বেগম ও খুরশিদা বেগম। অফিসে তিনজন রিপোর্টার কাজ করলেও ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের নিজস্ব সংবাদদাতা আছেন বলে দাবি সম্পাদক সাইয়েদ আরিফুল্লাহর।

চার পৃষ্ঠার জন্য সব লেখা ও সংবাদ নিজেই নির্বাচন করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টায় পত্রিকার কাজ শুরু হয়। সকালে দুজন অনুবাদক এসে সংবাদগুলো উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেন এবং পরবর্তী দুই ঘণ্টায় তিনজন লিপিকার ব্রডশিটে বিশেষ কলম ও কালি ব্যবহার করে তা লেখেন। চার পাতার মধ্যে প্রথম পৃষ্ঠায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ, দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সম্পাদকীয় এবং অন্য দুই পৃষ্ঠায় অন্যান্য স্থানীয় সংবাদ ও বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়। তবে সোমবারের আয়োজন কিছুটা ভিন্ন হয়। সেদিন তৃতীয় পৃষ্ঠায় কোরআন ও ইসলামী লেখা প্রকাশ করা হয়। পত্রিকা প্রকাশের দীর্ঘ যাত্রায় পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত দ্য মুসলমান। সম্পাদক আরিফুল্লাহর ভাষ্য মতে, তিনি প্রতিদিন পাঠকের প্রায় ২০টি টেলিফোন পান। তাঁদের অনেকেই ফোন করে অভিনন্দন জানান। বেশির ভাগ পাঠক ই-মেইলে যোগাযোগ করলেও এখনো পাঠকের চিঠি পান তাঁরা।

উর্দু পত্রিকা দ্য মুসলমানের জন্য সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভারতে উর্দু ভাষার চর্চা কমে যাওয়া। ভারত বিভাগের পর উর্দুর চর্চা ও উর্দুভাষী মানুষের সংখ্যা দুটিই কমেছে ভারতে। সুতরাং ভবিষ্যতে পত্রিকার পাঠক কমে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। আবার ভাষা চর্চা কমে যাওয়ায় ভারতে উর্দু ক্যালিগ্রাফি চর্চাও কমে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে লেখার জন্য যোগ্য কাতিব পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা আছে। এর সঙ্গে আছে পত্রিকার উপার্জন, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ। তবে সব কিছুর পরও আশাবাদী সাইয়েদ আরিফুল্লাহ। তিনি আশা করেন, তাঁরা পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবেন এবং তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম যথাসময়ে পত্রিকার হাল ধরবে।

তথ্যসূত্র : দ্য হিন্দু, খালিজ টাইমস

দ্য সিয়াসাত ডেইলি ও উইকিপিডিয়া

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments