উড়ন্ত বিমানের ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ
বিশ্বজুড়ে ঐতিহ্যবাহী বোয়িং ৭৭৭-এর উড্ডয়ন বন্ধ ঘোষণা করেছে বিভিন্ন দেশ। গেল শনিবার আমেরিকার ইউনাইডেট এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ মডেলের একটি যাত্রীবাহী বিমানের ইঞ্জিন মাঝ আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে ভেঙে পড়ে। এর পরই একই মডেলের বিমানগুলোর উড্ডয়ন বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
জানা যায়, আমেরিকার ডেনভার এয়ারপোর্ট থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-৩২৮ ২শ’ ৩১ যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু নিয়ে হনুলুলুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমানটির ডান দিকের ইঞ্জিনে হঠাৎ আগুন ধরে যায় এবং সেটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন পাইলট। সৌভাগ্যবশত এ ঘটনায় কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে, বিমানটি থেকে ছিটকে পড়া ইঞ্জিনের ধ্বংসাবশেষ ওই এলাকার বাড়ি-ঘরে আছড়ে পড়ে।
শনিবারের ঘটনার পর ইউনাইটেড, কোরিয়ান এয়ার এবং জাপানের প্রধান দু’টি বিমান সংস্থা নিশ্চিত করেছে, তারা তাদের বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ মডেলের সবগুলো বিমানের উড্ডয়ন স্থগিত রেখেছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িং নিজেই সতর্ক করেছে, এফএএ’র তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই মডেলের বিমানগুলোর উড্ডয়ন যেন বন্ধ রাখা হয়।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এনটিএসবির (আমেরিকার জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড) তদন্ত চলাকালে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি ৪০০০ ইঞ্জিন (পিডব্লিউ৪০০০) চালিত সক্রিয় ৬৯টি এবং সংরক্ষিত ৫৯টি ৭৭৭ মডেলের বিমানের কার্যক্রম স্থগিত রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় বিমান প্রশাসন বা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) তথ্যমতে, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসই দেশটির একমাত্র বিমান সংস্থা যারা বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমান ব্যবহার করে আসছিল। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া একই মডেলের বিমান চালিয়ে থাকে।
এ প্রেক্ষিতে, গত রোববার জাপান এয়ারলাইনস এবং অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তারা যথাক্রমে ১৩টি এবং ১৯টি পিডব্লিউ৪০০০ ইঞ্জিনধারী বিমানের উড্ডয়ন বাতিল করেছে। তবে বিকল্প বিমান ব্যবহার করে ফ্লাইটগুলো চালু রাখা হয়েছে। এরপর, সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কোরিয়ান এয়ার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনার পরপরই তারা বোয়িং ৭৭৭ মডেলের ৬টি বিমানেরই উড্ডয়ন বন্ধ করে দিয়েছে।
এফএএ জানিয়েছে, গত শনিবারের ঘটনায় প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি ৪০০০ ইঞ্জিনযুক্ত বোয়িং ৭৭৭ বিমান পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপক স্টিভ ডিকসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব তথ্য পর্যালোচনা করছি। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ওই মডেলের ইঞ্জিনে যে বিশেষ ধরনের পাখা ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর বেøড আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।’
এর আগে, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনার পর ১৮-মাসের বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা এবং বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন ভ্রমণ মন্দার মুখোমুখি হয়। মহাকাশ ও সামরিক যান নির্মাতা রেথিয়ন টেকনোলজিস’র জেট এবং হেলিকপ্টার ইঞ্জিন বিভাগ প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি। পরে, এফ.এ.এ. গত নভেম্বরে ম্যাক্সের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে করে নিলে অন্যান্য দেশও একই পথ অনুসরণ করে। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।