সেমি অটোমেটেড অফসাইড টেকনোলজি
স্টেডিয়ামের ছাদে বসানো ১২টি ক্যামেরা এবং সর্বমোট ২৯টি ক্যামেরা ও সেন্সর ম্যাচ চলাকালে মাঠের ঠিক কোথায় বল অবস্থান করছে সেটার তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। বলের পাশাপাশি প্রতিটি খেলোয়াড়ের অবস্থানও সিস্টেমটি খেয়ালে রাখে, এমনকি হাত-পায়ের অবস্থানও অফসাইডে পড়েছে কি না সেটা বিশ্লেষণ করে বের করা হয়। ক্যামেরার পাশাপাশি বলের মধ্যে থাকা ইনারশিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট বা ‘আইএমইউ’ সেন্সরের তথ্যও অফসাইড মাপার কাজে লাগানো হচ্ছে। খেলোয়াড় ও তাঁর হাত-পায়ের অবস্থান ও বলের অবস্থান ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার যাচাই করা হয়।
সে তথ্যগুলো পরে এআইর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে মাঠের বাইরের রেফারিদের জানানো হয়, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বলটি অফসাইডে ছিল কি না, সে তথ্য মাঠের রেফারিকে জানানো হয়। এর ফলে নিখুঁতভাবে অফসাইডের ব্যাপারে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু সিস্টেমটির অতিরিক্ত নিখুঁত কার্যক্রম আসলেই খেলায় প্রযোজ্য কি না সেটা নিয়ে চলছে বিতর্ক। অনেকেই বলেছেন, বুটের আধা ইঞ্চি অফসাইডে থাকলেও সেটাকে অফসাইড ধরা স্পোর্টসম্যানশিপ নষ্ট করছে।
ভিডিও অ্যাসিস্টেড রেফারি বা ভিএআর
এ প্রযুক্তি অবশ্য নতুন নয়, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ব্যবহারের পর বেশ আপডেট হয়েছে। সর্বমোট ৪২টি ব্রডকাস্ট ক্যামেরার ফুটেজ এবং তার মধ্যে থাকা আটটি সুপার স্লো মোশন ক্যামেরার চিত্র বিশ্লেষণ করে ভিডিও রেফারিরা গোল এবং গোল সম্পর্কিত সব সিদ্ধান্ত, পেনাল্টি, রেড কার্ড এবং মাঠে ঘটা ঘটনাবলির সঙ্গে জড়িত খেলোয়াড়দের পরিচয় নির্ণয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। বিশেষ করে খেলার মধ্যে ফাউল করা এবং গোলের ক্ষেত্রে বাগিবতণ্ডার দ্রুত সমাধান ভিএআরের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। অবশ্য এ প্রযুক্তি নিয়েও রয়ে গেছে একই বিতর্ক, খেলার মজা অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হচ্ছে প্রযুক্তির অতিরিক্ত চুলচেরা বিশ্লেষণের কবলে।

ফিফা প্লেয়ার অ্যাপ
বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই খেলোয়াড়রা নিজেদের পারফরম্যান্সের সব তথ্য হাতের মুঠোয় পেয়ে যাচ্ছেন। তা সম্ভব করেছে ফিফা প্লেয়ার অ্যাপ। মাঠে থাকা সব ক্যামেরা এবং সেন্সরের তথ্য সংগ্রহ করে, ফিফার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দল ও এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়ের ফোনে তিন ধরনের রিপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আছে এনহান্সড ফুটবল ডাটা মেট্রিক্স, খেলোয়াড়ের গতিবিধি, ম্যাচে তাঁরা অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঠিক কিভাবে কো-অপারেশন করেছেন বা খেলায় বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেসবের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া। এ ছাড়া থাকছে ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স মেট্রিক্স, খেলোয়াড়ের স্পিড, দৌড়ানোর ধরন—কত দূর কিভাবে দৌড়েছেন, কতক্ষণ দম ধরে রাখতে পেরেছেন এমন তথ্য। খেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিশ্লেষণ থাকছে এনহান্সড ফুটবল ইনটেলিজেন্স মেট্রিক্স অংশে, এটির মাধ্যমে খেলোয়াড়রা আরো সহজে স্ট্র্যাটেজি পরবর্তী ম্যাচের জন্য সামঞ্জস্য করে নিতে পারবেন।
গোললাইন টেকনোলজি
২০১৪ সাল থেকেই গোললাইন টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গোল পোস্টের দিকে তাক করা ১৪টি হাইস্পিড ক্যামেরা গোলপোস্টের থ্রিডি এনিমেশন তৈরি করতে সাহায্য করে, যার মাধ্যমে গোল ঠিকমতো হয়েছে কি না সেটার তথ্য রেফারির কাছে এক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছেও যায়, আবার গোল কিভাবে হয়েছে তার নানাবিধ অ্যাঙ্গেলের রিপ্লে দর্শকদের দেখাতেও কাজে আসে। প্রযুক্তিটি গত আট বছরে করা হয়েছে আরো নির্ভুল ও নিখুঁত। ফলে বিশ্বকাপের প্রতিটি গোলের একটিতেও থাকছে না বিতর্কের সুযোগ।