Wednesday, December 6, 2023
spot_img
Homeসাহিত্যবিয়ে নিয়ে বাছাবাছি

বিয়ে নিয়ে বাছাবাছি

ঝড়ের বেগে বয়স পেরিয়ে গেলো। বহু চেষ্টা করেও বিয়ের ব্যবস্থা হয়নি হাশেমের। লাকাচুয়া গ্রামের হাশেম হাওলাদার। প্রাইমারির শিক্ষক। বয়স এখন তেত্রিশ। টগবগে তেইশ বছর বয়স থেকে মেয়ে দেখা শুরু। প্রায় এক যুগ ঘুরেও মনের মতো মেয়ে পায়নি। এর জন্য হাশেমই দায়ী। মেয়ে দেখা নিয়ে ওর ভীষণ বাছাবাছি। যে মেয়ে সুন্দরী; সে পড়াশোনায় ঠাটকলা। যে পড়াশোনায় জাহাজ; সে আবার চোখে ওঠার মতো নয়। যার দুটিই পারফেক্ট; তার সমস্যা বংশে। কারো চুল বড় তো নাক বোঁচা, নাক চোখা তো দাঁত উঁচু! রান্না জানে তো গান জানে না, গান জানে তো নাচ জানে না! এসবে হাশেমের হবে না। হাশেমের চাই বেস্ট ওয়ান। তার বক্তব্য, ‘বিয়ে তো জীবনে একটাই করবো! তাই দেখে-শুনে করতে হবে, ঠকলে চলবে না।’ যদিও এখন বক্তব্যের ভিত নড়ে গেছে বয়সের ভারে। অতো বাছলে আর চলবে না, হাশেম নিজেও বুঝে গেছে। সুন্দরী, টুকটাক পড়াশোনা জানে আর রান্নাটা পারলেই চলবে—এখন এই কন্ডিশনে মেয়ে দেখছে।

একটি মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেল আলীপুর গ্রামে। ঘণ্টা দুয়ের হাঁটা পথ। বাবা, চাচা, মামা, ছোট বোনকে নিয়ে শুক্রবার জুমার পর গেলো মেয়েদের বাড়ি। রাজ্জাক সরদারের বড় মেয়ে জয়নবকে দেখানো হলো। প্রথম ধাক্কাতেই হাশেমের মনে ধরল। একদম জাদুকরী চেহারা, নৌকার মতো চোখকে হাশেমের মনে হলো মায়ার ভেলা। জয়নব পড়াশোনায় মেট্রিক পাস, রান্নাতেও ফার্স্ট ক্লাস। বোনকে হাশেম জানাল, ‘এবার আর হাতছাড়া করতে চাই না।’ ব্যাস, কাজ হয়ে গেলো। সবার সম্মতিতে তারিখ পড়ল পরের শুক্রবার।

আয়োজন হলো ধুমধাম করে। হানিফ হাওলাদারের একমাত্র ছেলে বলে কথা! হাশেমের খুশির দ্যুতি সূর্যকেও হার মানিয়ে দেয়। তেলোই দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই বরযাত্রা বেরিয়ে পড়ে। জুমার নামাজ আলীপুরেই পড়ল। সবার মতামতে মসজিদেই বিয়ে হলো। ছেলে সরকারি চাকরিজীবী—মোহরানা ধরা হলো ছয় লাখ। হাশেম খুশি মনে মসজিদে বসেই স্বাক্ষর করে। মেয়ের কবুল আর স্বাক্ষর আনতে কাজির সঙ্গে গেলো হাশেমের ছোট ভাই কাশেম আর সেজখালু। বউ লম্বা ঘোমটা টানা, কোনোমতে হাত বের করে স্বাক্ষর দিলো কাঁপতে কাঁপতে। সে কাঁপন হয়তো লজ্জার, নয়তো ভয়ের।

বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হলো। পালকি থেকে নামিয়ে বধূ বরণের সময়ও লম্বা ঘোমটা টানা। সবাই বউ দেখার জন্য ঘোমটা সরানোর বায়না ধরলেও কাজ হয়নি। হাশেম ঘোমটা তুলতে দেয়নি। হাশেম বলে, ‘আমার আগে আমার বউ কেউ দেখতে পারবে না।’ যেই কথা; সেই কাজ। কেউ দেখতেও পারেনি।

রাত দশটার দিকে হাশেম বাসর ঘরে ঢোকার অনুমতি পায়। ঘরে ঢুকে দরজার খিল টেনে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো খাটের দিকে। হাশেম সামান্য উঠে বসল। বউয়ের উদ্দেশ্যে বলল, ‘তুমি দেখি এখনো ঘোমটা টেনে আছো! অতো লজ্জা পেলে হবে? আমি ছাড়া তো কেউই নেই। ঘোমটা সরাও!’ এই বলে হাশেম নিজেই ঘোমটা উঁচিয়ে ধরল। তারপর? তারপর ভেসে এলো এক বিকট চিৎকার! ‘ও মাগো…! এই কালিবাউশ কে?’ বলতে বলতে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে হাশেম। রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে। ততক্ষণে মা, খালা, চাচিরা রুমে ঢুকে দেখেন অদ্ভুত অসুন্দর এক মেয়ে বসে আছে। ছোট বোন দেখে বলল, ‘আরেহ এ তো জয়নব না! এ কে! এই মেয়ে তুমি কে?’ ততক্ষণে হাশেমের বাবা আর চাচাও চলে এসেছেন। তারাও এ দৃশ্য দেখে তাজ্জব। হানিফ হাওলাদার বলল, ‘যাকে দেখেছি, এ তো সে না! এমন একটা চিটারি করল, রাজ্জাক সরদারের খবর আছে।’

পরবর্তীতে জানা গেলো, বিয়ের আগে যাকে দেখানো হয়েছিল; সে আসল জয়নব নয়। সে ছিল জয়নবের ছোট বোন রোকসানা। বড় মেয়ে দেখতে কালো বলে বিয়ে হচ্ছিল না কোথাও। তাই রাজ্জাক সরদার এমন চাল চেলেছেন। হাশেমের এখন কী উপায়? জয়নবকে ডিভোর্স দিতে হলে লাগবে ছয় লাখ টাকা। অবশ্য ডিভোর্সের চিন্তা হাশেমের মাথায় নেই। শুধু ভাবছে, এত ঘুরে, এতে বেছে দিনশেষে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধরাটাই খেলো সে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments