মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হালাল উপার্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হারাম থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। হালাল উপার্জন করার জন্য তাদের পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হয়, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাকো, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারো। (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা দিক-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ করো; পুনরুত্থান তো তাঁরই কাছে।
(সুরা : মুলক, আয়াত : ৬৭)
মহান আল্লাহ মাটির নিচ থেকে শুরু করে আকাশের সীমা, সাগরের তলদেশ সর্বত্র বান্দার জন্য রিজিক ছড়িয়ে রেখেছেন, কিন্তু এগুলো ধরার কৌশল বান্দাকে শিখতে হবে, দক্ষতা অর্জন করতে হবে, তবেই সে তা অর্জন করতে পারবে। কেউ মাটিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে, কেউ আকাশে বিমান উড়িয়ে, কেউ সাগরে মাছ শিকার করে, কেউ আবার সাগলের তলদেশের মণি-মুক্তা থেকে, কেউ আবার মহাকাশগমন করেও রিজিক উপার্জন করছে। কেউ আবার বাতাসের তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করে রিজিক উপার্জন করে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ বান্দার রিজিকের কত দরজা খুলে রেখেছেন, তা গুনে শেষ করা অসম্ভব। তবে মহান আল্লাহর দেওয়া অফুরন্ত রিজিকগুলো অর্জন করতে এগুলো নিয়ে গবেষণা করা আবশ্যক। যারা মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে এগুলো নিয়ে গবেষণা করবে, তারা একদিকে যেমন হিদায়াত পাবে, অন্যদিকে এগুলোর রহস্য উদ্ঘাটনে সফল হবে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে, নৌপথে জাহাজসমূহের চলাচলে—এগুলোর মধ্যে আছে মানুষের কল্যাণ। মৃত পৃথিবীকে সঞ্জীবিতকরণে, তাতে নানাবিধ জীবজন্তু সঞ্চারিত করার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। বায়ুরাশির গতি পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থ সঞ্চিত মেঘের সঞ্চারণে সত্যি সত্যিই জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন আছে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৪)
পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মহান আল্লাহপ্রদত্ত উপকরণগুলো থেকে উপকৃত হতে হলে অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বহু নবী-রাসুলের জীবনী উল্লেখ করেছেন, যাতে তাঁদের দাওয়াতি কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের দক্ষতা নিয়েও আলোচনা করেছেন। যেমন—নুহ (আ.) কাঠের কাজ ভালো জানতেন, মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর নিজ হাতে তৈরি নৌকা দিয়েই তিনি তাঁর উম্মতকে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল, আর যখনই তার কওমের প্রধানদের কোনো দল উহার নিকট দিয়ে গমন করত, তখনই তার সঙ্গে উপহাস করত। সে বলত, যদি তোমরা আমাদের উপহাস করো তাহলে আমরাও (একদিন) তোমাদের উপহাস করব, যেমন তোমরা আমাদের উপহাস করছ। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩৮)
এবং দাউদ (আ.) ছিলেন লোহার কাজে পারদর্শী। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁর হাতে লোহা মোমের মতো নরম হয়ে যেত। তিনি তা দিয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধের বর্ম ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) নিশ্চয়ই দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং আদেশ করেছিলাম, হে পবর্তমালা! তোমরা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং বিহঙ্গকুল তোমরাও। তার জন্য নমনীয় করেছিলাম লৌহ, (এই আদেশ করে) তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করো, কড়া যথাযথভাবে সংযুক্ত করো এবং তোমরা সৎকাজ করো, তোমরা যা কিছু করো আমি ওর সম্যক দ্রষ্টা। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১০-১১)
জাকারিয়া (আ.)-ও কাঠের কাজে বেশ দক্ষ ছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জাকারিয়া ছুতার ছিলেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫০)
অতএব মুসলিম জাতির উচিত ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও দক্ষতা অর্জন করা। ইসলামের মৌলিক জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম জাতিকে শক্তিশালী করার নিয়তে হালাল জাগতিক বিষয় শেখাতে ও পেশা অবলম্বনে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং উৎসাহ আছে।