Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeজাতীয়বিএনপির সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম

বিএনপির সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম

প্রথম দিন পাঁচ জেলায় কর্মসূচি জনগণের দুর্বার আন্দোলনে সরকার পালানোর পথ পাবে না : টাঙ্গাইলে মির্জা ফখরুল হবিগঞ্জে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেলেনি প্রশাসনের অনুম

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অধীনে টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর ও যশোরে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। প্রতিটি জেলার সমাবেশস্থলে তিল ধারনের ঠাঁই ছিলো না। হবিগঞ্জে পুলিশের বাধায় বিএনপির সমাবেশ পন্ড হয়ে যায়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলি-লাঠিচার্জে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। যশোরে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি।

মহসিন রাজু বগুড়া থেকে জানান, বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন। সমাবেশের কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জনগণ কোন সরকারকে না চাইলে কোন বিদেশী শক্তিই তাকে রক্ষা করতে পারে না। যখন বিপদ আসবে পুলিশও তখন পাশে থাকবে না। তাই তারেক রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলুন। সাহস করে রাজপথে নামলে নিশিরাতের ভোট চোর সরকারের বিদায় অনিবার্য।

তিনি বলেন, যারা ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাদের চোখে এখন ঘুম নাই। মার্কিন সরকার র‌্যাবসহ কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যক্তিকে কালো তালিকাভ‚ক্ত করেছে। আপাতত এই তালিকায় ৬০ জনের নাম আছে শুনে অনেকেই আতঙ্কিত। সামনে আরো কাদের নাম আসবে তা দেখার অপেক্ষায় জাতি। পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওনাকে তো বিদেশে চালান করছিলেন পালাইতে পারছে? পারেনাই। এতেই বোঝা যায় পালানোর কোন সুযোগই নাই। দেশেই যখন থাকতে হবে তখন ১২ বছরের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চান, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নাহলে জনগণের আদালতে বিচার হবে নিশিরাতের এই ভোট চোর সরকারের ।

গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা বিএনপির আয়োজনে বগুড়া শহরের নবাব বাড়ী রোডস্থ জেলা কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি ও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার্থে বিদেশে যেতে দেবেন কিনা স্পষ্ট করে বলুন। না বললে আমরা রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে পড়বো এবং সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরবো।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য আলী আজগর তালুকদার হেনার পরিচালনায় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- দলের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভ‚ঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান।

মাহফুজুল হক আনার দিনাজপুর থেকে জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা অনেকেই সমাবেশস্থলে আসতে পারেননি। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ শহরের প্রবেশ স্থলগুলোতে বাধা দেয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় লাঠি পেটা করা হয়েছে। তবে সমাবেশস্থলে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, খালেদা জিয়া মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষেপাবেন না। সরকার পতনের জন্য কোটি মানুষের প্রয়োজন হয় না। কেবল ঢাকা অবরোধের মাধ্যমেই স্বৈরাচারী সরকারের পতনের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পেছনে রয়েছে সমগ্র দেশের জেলা উপজেলা ও গ্রামের কোটি কোটি মানুষ। নির্বাচনে বিএনপি কোটি কোটি ভোট পায়। যারা ভোট দেয় তারা সকলেই বিএনপি করে না। তারা ভালোবাসে বিএনপি’র শহীদ জিয়াকে। ভালোবাসে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে।

তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত কেউ বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পায় না একথা ঠিক নয়। শহীদ জিয়ার শাসনামলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আ স ম আবদুর রব বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা মো. নাসিমও সুযোগ পেয়েছিলেন। আর বেগম খালেদা জিয়াকে তো মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে।

তিনি উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাচারীদের উদ্দেশে বলেন, একজন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। সুস্থ হলেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু বেগম জিয়া ফাঁসির আসামি নয়। তিনি মিথ্যা মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাহলে তিনি কেন উন্নত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন না। আর তার যে উন্নত চিকিৎসা দরকার এ কথা আমি বা আমাদের দলের কথা নয়। এ কথা চিকিৎসকদের। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। দেশের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষেপাবেন না।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির সমাবেশ গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় স্থানীয় স্টেশন চত্বরে হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে বিএনপি। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে প্রশাসন তা বাতিল করলে সমাবেশ স্থানীয় লোকভবনে করার প্রস্তুতি নেয়। বিএনপি সমাবেশ লোকভবনের (অডিটোরিয়াম) বাইরে করার অনুমতি চাইলে প্রশাসন তা দেয়নি।

গতকাল বুধবার সকালে জেলরোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে সভা করার অনুমতি পায়। কার্যালয়ের ভেতরে সমাবেশের অনুমতি থাকলেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সড়কে চলে আসে। পুলিশ বাধা দিলেও নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ শুরু করেন। বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে জানান, তাদের সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই সমাবেশ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। এ কারণে কোন প্রকার ব্যানার বা আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতির নাম ঘোষণা ছাড়াই কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই দিনাজপুর পৌর মেয়র বিএনপি নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দল খালেক, প্রিন্সিপাল আসাদুল হাবিব দুলু’র বক্তব্যের পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন।

শাহেদ রহমান যশোর থেকে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির দাবিতে গতকাল বুধবার টাউন হল ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গণসমাবেশের হয়েছে। সমাবেশে প্রায় ৫০ সহস্রাধিক জনতার উপস্থিতি হয়েছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নামে ছাগল খুঁজছে। ফলে আমরা এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। এমনকি ঘরে বসেও থাকবে না। একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। গণসমাবেশে মির্জা আব্বাস আরো বলেন, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করা এ দেশের সরকারকে বিদেশে মাফিয়াদের দেশ বলে চেনে। এদের দেশ থেকে বের করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে। যশোর থেকে প্রতিরোধ যাত্রা শুরু হল।

তিনি আরো বলেন, এ দেশে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা মুক্তি পেয়ে বিদেশে চলে যায়। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। এ সরকার চায় খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে। কারণ তারা মনে করেন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে গেলে এ সরকার টিকে থাকতে পারবে না। তবে তাকে আটকে রেখেও শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের পতন ঘটাবে। যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস বেগমের সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে, দীর্ঘ ৯ বছর পর জেলা বিএনপির প্রকাশ্যে কোন সমাবেশ হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ-উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ শহরমুখী হয়। দুপুরের আগেই শহরের টাউন হল ময়দান বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দুপুরের পর শহরের মানুষের ঢল নামে। উপজেলা ও গ্রাম থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির গণসমাবেশ বানচাল করার জন্য পথে পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বাঁধা দেয়া হয়েছে। তারপরও বাঁধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগদান করেছেন। অনেকদিন পর বিএনপি বড় ধরণের সমাবেশ করতে সক্ষম হলো।

গতকাল বুধবার ভোর থেকে বিভিন্ন উপজেলা হতে আসা দলটির নেতাকর্মীরা টাউনহল মাঠে ঢুকতে চাইলে পড়েন পুলিশি বাধার মুখে। সকাল পৌনে ৯টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে টাউনহল মাঠে ঢুকে পড়েন। তারা মাঠের দখল নিয়ে মঞ্চ ও মাইক সংযোগের কাজ শুরু করেন। তবে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাদের ইতিবাচক যোগাযোগ চলছিল। তার ফলশ্রুতিতে অনুমতি সাপেক্ষেই বিএনপি সমাবেশ করছে। তবে কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়নি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

আতাউর রহমান আজাদ টাঙ্গাইল থেকে জানান, বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাস আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন কমিশন গঠন করে কোন লাভ হবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই নির্বাচন সংলাপ করে কোন লাভ নেই। এই সরকারকে পদত্যাগ করে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

গতকাল বুধবার বিকেলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। টাঙ্গাইল জেলা সদর মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি আরো বলেন, আমাদের আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই দানব সরকারের পতন ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। জনগণের দুর্বার আন্দোলনে এই সরকার পালানোর পথ পাবে না।

দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে বিএনপি মহাসচিব সভামঞ্চে পৌছালে শত শত নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সভাস্থল। পরে বিএনপি মহাসচিব সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে শান্ত হতে বলেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পরে টাঙ্গাইলে বিএনপির উদ্যোগে এই প্রথম বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানান, সমাবেশের জন্য প্রথমে মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রশাসন পৌর উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি প্রদান কথা বললেও পরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল আউটার স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার কথা বলে। পরবর্তীতে রাতে আবারো সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে জেলা সদর মাঠে করার অনুমতি প্রদান করে। পরে গতকাল বুধবার সকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলা সদর মাঠে তাৎক্ষণিক মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ করে। সল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমাবেশে যোগ দেয়। দুপুরে বিশাল মাঠ কানায় কানায় ভরে উঠে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, গত ১৪ বছর ধরে দেশকে আওয়ামী লীগ অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। র‌্যাব-পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে দেশে দমন নীপিড়ন চালাচ্ছে। তাই র‌্যাবকে আমেরিকা নিষিদ্ধ করেছে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভিসাও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

মো. ফজলুর রহমান হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সমাবেশ পন্ড হয়েছে। সংঘর্ষে পুুলিশসহ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী গুলি ও ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ও কয়েকশত রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। আতঙ্কিত মানুষ চারদিকে ছুটোছুটি শুরু করে। আশপাশ এলাকার বাসাবাড়ির নারী-পুরুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশের দাবি বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করলে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। আর বিএনপির দাবি সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দিলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল হবিগঞ্জে বেলা ২টায় শহরের শায়েস্তানগরস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ফারুক, বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ প্রায় ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা হবিগঞ্জ আসেন। নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় নেতা কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন।

বেলা পৌনে ২টার দিকে শহরের শায়েস্তানগর বাজার এলাকায় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসার চেষ্টা করে। এ সময় বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শুরু হয় পুলিশ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। প্রায় আধা ঘন্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াকালে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলির শব্দে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। সংঘর্ষে ১০-১২ জন পুলিশসহ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজীব আহমেদ রিংগন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ তুষার, ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমানকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই তিনিসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হবিগঞ্জ আসেন। তারা সমাবেশস্থলে যাবার সময় পুলিশ বাধা প্রদান করে। পরে নেতাকর্মীরা তাদের সমাবেশস্থলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসুচি পালনে পুলিশ বাধা প্রদান করে। সমাবেশস্থলের বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশ ব্যারিকেট সৃষ্টি করে। পুলিশ বিনা উস্কানিতে লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এতে অসংখ্য নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।

এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার শিমুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments