কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় দেশের সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা। দেশের দুই প্রধান কিশোর ও কিশোরী সংশোধনাগারে ধারণক্ষমতার বেশি অপরাধীদের রাখা হয়েছে। এতে করে তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, মেডিটেশনসহ অন্যান্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ঘিঞ্জি পরিবেশ হওয়াতে অনেক সময় কিশোর অপরাধীরা সংশোধনাগারে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। অপরাধীরা কিশোর বলে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা। তাদের আটকের পরেই আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। সেখানে তাদের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রেখে সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের টঙ্গীতে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ৩০০ জন।কিন্তু, সেখানে রাখা হয়েছে ৭৪৭ জনকে। যা আড়াই গুণ বেশি। যশোর জেলার সদর উপজেলার পুলেরহাটের ধারণক্ষমতা হচ্ছে ১৫০ জন। কিন্তু সেখানে রাখা হয়েছে ৩৪৭ জনকে। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে কিশোরী অপরাধীদের রাখা হয়েছে ১০১ জনকে। গত কয়েক মাসেও এর ধারণক্ষমতার বাইরে কিশোরী অপরাধী ছিল। তবে সেখানে সংখ্যা কমে এসেছে।
এ বিষয়ে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. এহিয়াতুজ্জামান জানান, ধারণক্ষমতার বাইরে এখানে কিশোর অপরাধী আছে। তাদের দেখভাল করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। যশোরের পুলেরহাটের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ মাসুদ জানান, ধারণক্ষমতার বাইরে কিশোর অপরাধী আছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিশোর অপরাধীরা কেন্দ্রগুলোতে সুশৃঙ্খলভাবে থাকতে পারে না। বিভিন্ন সময় তারা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়াঝাটিতে জড়াচ্ছে। তিনি আরও জানান, অনেক সময় তারা দেয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করছে। এতে কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। দুই কেন্দ্রের কিশোর অপরাধীদের ভাড়া করে কোনো ভবনে রাখা যায় কিনা তা কর্তৃপক্ষ চিন্তা-ভাবনা করছে।
সূত্রে জানা গেছে, সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে কিশোর অপরাধীদের চাপ আর অন্য দিকে রয়েছে প্রচণ্ড জনবল সমস্যা। এতে তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। রাতের বেলায় শোয়ার সময় এবং গোসল করতে গিয়ে বেশি সংঘর্ষে জড়াচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। যেসব অপরাধী এখানে আসে তাদের আদালত থেকে জামিন পেতে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস লেগে যায়। আবার যারা খুনের সঙ্গে জড়িত তারা সেখানে দীর্ঘমেয়াদি থাকে।
সূত্র জানায়, আগে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে অপরাধীর সংখ্যা কম থাকতো। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে। সেটি আর কমেনি। গত ৯ বছর ধরে ওই কেন্দ্রগুলোতে ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে কিশোর অপরাধীদের রাখা হচ্ছে। সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৩ই আগস্ট যশোরের পুলেরহাটে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়। কেন্দ্রের ভেতরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের কিছুটা টনক নড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অধিক কিশোর অপরাধী হওয়ার কারণে জনবলের অভাব দেখা দিয়েছে। সেবা দিতে কিছুটা বিলম্ব হলে কেন্দ্রের মধ্যে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে তারা তর্কে জড়ান।