অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের যখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। চাল, ডাল, আটা-ময়দা, ভোজ্যতেল, মাছ-মাংস, ডিম, মসলাসহ সব নিত্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে চড়া দরে; শিশুখাদ্যের দামও আকাশছোঁয়া।
বস্তুত বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক মূল্য বাড়িয়ে একটি চক্র ডিম ও মুরগির বাজার থেকে মাত্র দুই সপ্তাহে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রশ্ন হলো, এসব ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নীরব কেন? আমদানি পণ্যের পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়ছে লাগামহীন গতিতে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধির জোর তৎপরতা শুরু হয়। যেহেতু আমদানিকৃত কোনো পণ্য স্থানীয় বাজারে আসতে আসতে কয়েক মাস লেগে যায়, সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাজারে সেই পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বেআইনি ও অনৈতিক। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনো পণ্যের দাম কমানো হলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়তে অনেক সময় লেগে যায়।
দুঃখজনক, বাজারদরের অব্যাহত চাপে ভোক্তারা দিশেহারা হলেও সহজে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম নিæমুখী হলেও দেশে বাড়ানো হলো এর দাম। এ অসহনীয় পরিস্থিতিতে ভোক্তারা বাধ্য হয়ে অনেক পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরছেন। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ। মোটা চাল, ডাল, ডিম, আলু, পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ-এসব পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
প্রশ্ন হলো, স্বল্প-আয়ের মানুষের বেঁচে থাকার উপায় কী? গত এক বছরে বেসরকারি খাতে কর্মরত বিপুলসংখ্যক কর্মীর বেতন কমেছে; অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। সম্প্রতি জীবনধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশে বহু মানুষ মানবেতন জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি অব্যাহত থাকলে মানুষ খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবে কী করে? যারা অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর শাস্তি দিতে হবে। জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে এমন পরিস্থিতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।