মার্কিন জোটে যোগদান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নবপ্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক জোটে (আইপিইএফ) যোগদান প্রশ্নে বাংলাদেশই সিদ্ধান্ত নিবে। এখানে চীন বা তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রের আগাম আপত্তি অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোন জোটে যাবে বা যাবে না সেই সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই সরকারের নীতিনির্ধারকরা গ্রহণ করবেন। কারও সুপারিশ বা আপত্তি এখানে বিবেচ্য নয়। অর্থনৈতিক ওই জোটে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে ভাবছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ-বিন মোমেন জানান, এ নিয়ে শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি পর্যালোচনা বৈঠক হবে, যেখানে যোগদানের প্রেক্ষিত এবং জোটের সম্ভাবনা বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ কীভাবে সমুন্নত থাকবে সেটাই বিচার-বিশ্লেষণে রাখা হবে। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি স্টাডি করার প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
এদিকে মার্কিন অর্থনৈতিক জোটের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের সার্বভৌম অবস্থানকে হেয় করে এমন অযাচিত মন্তব্য না করতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর প্রতি এরইমধ্যে সেগুনবাগিচার তরফে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মার্কিন অর্থনৈতিক জোটে বাংলাদেশের যোগদান প্রশ্নে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’দফা বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে চীন। ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সর্বশেষ বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উপস্থিতিতে এ নিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেন।
চলতি মাসের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক লিউ জিনসং বেইজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ জামানের সঙ্গে বৈঠকে আইপিইএফে যোগদানে ঢাকাকে নিরুৎসাহিত করেন। অবশ্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ওই জোটকে ‘সম্ভাবনাময়’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে বলে জানান।
আইপিইএফে যোগদানে চীনের সতর্কতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কারও কথায় আমরা যেমন যোগ দেবো না, তেমনি কারও কথায় যোগ দেয়া থেকে বিরতও থাকবো না। যদি আমাদের স্বার্থে যায় এবং আমরা যদি মনে করি এতে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে অবশ্যই তাতে আমরা যুক্ত হবো। চীন কি মনে করলো, অন্য কে কি ভাবলো এসব নিয়ে চিন্তার কোনো অবকাশ নেই। পররাষ্ট্র সচিব খোলাসা করেই বলেন, কারও পছন্দ কিংবা অপছন্দে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের স্বার্থ বিবেচনায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোটে সম্পৃক্ততার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ।
গত ২৩শে মে টোকিও সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রাথমিকভাবে ১৩টি দেশকে যুক্ত করে আইপিইএফের আনুষ্ঠানিক সূচনার ঘোষণা দেন। হোয়াইট হাউস প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম- এই ১২টি দেশকে নিয়ে আইপিইএফের যাত্রা শুরু করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা আগে বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস-এর অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে ভাববে বাংলাদেশ। সামরিক পার্টে নয়। যুক্তরাষ্ট্র এখন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির সেই কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উপাদানযুক্ত আইপিইএফ ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ কি ভাবছে? ক্যাটাগরিক্যালি জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা ইতিবাচকই আছি, এ নিয়ে অংশীজনদের নিয়ে শিগগিরই পর্যালোচনা বৈঠক করবো।