দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশ এখন সেরা। ফিফার পুরুষ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অবস্থান যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তখন মেয়েদের সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের শিরোপা জয়ে দেশবাসী স্বভাবতই আনন্দিত ও উল্লসিত। আসলেই এ সাফল্য গৌরবদীপ্ত।
বলা যায়, দেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরা অর্জন এটি। যদিও ২০০৩ সালে পুরুষদের সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ, তবে এরপরের ইতিহাস শুধুই হতাশার। ফুটবলে পুরুষরা যখন একের পর এক ব্যর্থতার জন্ম দিয়ে দেশবাসীকে হতাশায় নিমজ্জিত করছিল, তখন মেয়েরা উঠে আসছিল আশার আলোকবর্তিকা হাতে। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮ ইত্যাদি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলাররা ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়ে আসছিল। ২০২১ সালে মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরেই বাংলাদেশ দল শিরোপা জয় করে নেয়।
অবশেষে এলো বহু কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সোমবার রচিত হলো নতুন ইতিহাস। গোটা টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের সোনার মেয়েরা। তারা শুধু শিরোপাই জেতেননি, টুর্নামেন্টে ছিলেন অপরাজিতও। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনি দুটি হ্যাটট্রিক করেছেন।
মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। দলের অন্যদের কৃতিত্বও কম নয়। তাদের সীমাহীন আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের ফসল এ সাফল্য। এজন্য তাদের সবার প্রতি রইল আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন দলটির কোচ, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও জানাই অভিনন্দন। আমরা আশা করব, এই নারীদের হাত ধরেই একদিন দেশে ফুটবল ফিরে পাবে হারানো গৌরব। এ লক্ষ্য সামনে রেখে এই দলটির জন্য আর্থিক ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
অন্য অনেক দেশের মতো একসময় বাংলাদেশেও ফুটবল ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ঢাকার ফুটবল লিগের বড় দলগুলোর খেলা নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল সারা দেশের মানুষের। সে সময় স্টেডিয়াম পূর্ণ হয়ে যেত দর্শকদের ভিড়ে। বড় বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো ঢাকায়। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সাফল্যও দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ফুটবলের সেই রমরমা যুগ এখন আর নেই। খেলার মান পড়ে যাওয়া, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাব, ক্রিকেটের সাফল্য ইত্যাদি কারণে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এ অবস্থায় নারীদের সাফল্য ফুটবল নিয়ে আমাদের নতুন করে আশান্বিত করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ফুটবলে মেয়েদের এ পর্যায়ে উঠে আসার কাজটি সহজ ছিল না। এখানে রয়েছে নানা সামাজিক-পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা জয় করেই তারা এ পর্যায়ে এসেছেন। এ সাফল্য ধরে রাখতে হলে উন্নত প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে মেয়ে ফুটবলারদের মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সারা দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কিশোর-কিশোরীদের বাছাই করে নিয়মিত ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। ক্রিকেটে এ ধরনের উদ্যোগের সুফল পাচ্ছি আমরা। ফুটবলের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ খেলায় আমাদের ব্যর্থতা ঘুচবে অবশ্যই। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় খেলা ফুটবলকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।