Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মবরকতময় বিসমিল্লাহ

বরকতময় বিসমিল্লাহ

মুসলমানের সব অনুভূতি, ব্যাখ্যা ও ব্যক্তিগত অবস্থান তার অন্তরের উপলব্ধি থেকে উৎসারিত বিশ্বাসের সমষ্টি ও প্রতিফলন মাত্র। তার বিবেচনায় কোনো কিছু বলা, করা বা মেনে নেওয়া ঈমানি বিশ্লেষণসাপেক্ষ। অথচ আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে এমন কতগুলো কথা বলি, যা রীতিমতো বিভ্রান্তিকর। ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে প্রচলিত বিভ্রান্তিগুলো বর্জন করা খুবই জরুরি।

জাহেলি যুগে লোকদের অভ্যাস ছিল সব কাজ তাদের দেব-দেবীর নামে শুরু করা। এ চেতনা রহিত করার জন্যই ‘বিসমিল্লাহ’ চালু হয়। ইসলামের সূচনাকালে প্রিয় নবী (সা.) সব কাজ ‘বি-ইসমিকা আল্লাহুম্মা’ বলে শুরু করতেন এবং লেখাতেন। কিন্তু ‘বিসমিল্লাহ’ নাজিল হওয়ায় সব কাজে ‘বিসমিল্লাহ…’ পূর্ণবাক্য ব্যবহারের নিয়ম প্রবর্তন করা হয়। (কুরতুবি, রুহুল মাআনি)

‘বিসমিল্লাহ’র অবমাননার আশঙ্কার ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যবহার না করা উচিত। চিঠিপত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার কারণে অবমাননার আশঙ্কা থাকলে ‘বিসমিল্লাহ’ না লিখে বরং লেখকের উচিত মনে মনে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে নেওয়া, যেখানে অবমাননার আশঙ্কা নেই; যেমন—মসজিদ, মাদরাসা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী গেট, সাইনবোর্ড, অনারবোর্ড, স্মৃতিফলক, ভিত্তিপ্রস্তর, বাড়ি-গাড়ির সামনে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা অত্যন্ত বরকতময়। এমন ক্ষেত্রে ‘বিসমিহি তালা’র ব্যবহার ধর্মের নামে নতুনত্বের বিভ্রান্তি মাত্র। ‘বিসমিল্লাহ…’ উচ্চারণে ‘আল্লাহ’, ‘রহমান’, ‘রাহিম’ তিনটি পবিত্র নাম সন্নিবেশিত। অথচ আল্লাহর নাম স্মরণের আকাঙ্ক্ষায় ব্যবহৃত ‘বিসমিহি তালা’র মধ্যে ‘আল্লাহ’ শব্দটিও অনুপস্থিত! প্রিয় নবী (সা.) ‘বিসমিল্লাহ’ নাজিলের পর অন্য শব্দমালা ব্যবহার করেননি। তাই অবমাননার আশঙ্কায় ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যবহারের আমল ছেড়ে দেওয়া যায় কি?

পবিত্র কোরআনে সাবা নগরীর রানি বিলকিসের সঙ্গে সুলাইমান (আ.)-এর পত্রালাপে ‘বিসমিল্লাহ’র উল্লেখ আছে। সুরা নামলের ২৯ থেকে ৩৪ নম্বর আয়াতের আলোচনায় ‘বিসমিল্লাহ’র শক্তি ও রানির অসহায়ত্ব প্রমাণিত হয়েছে। সুলাইমান (আ.)-এর চিঠি এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর চিঠির সূচনায় ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা প্রমাণ করে, চিঠিপত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা নবীদের সুন্নত। সাবার রানি বিলকিসের কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা ছিল, আর রানি ছিলেন অমুসলিম। মিসরীয় গবেষক ড. হামিদুল্লাহর মতে, প্রিয় নবী (সা.) যেসব অমুসলিম শাসককে পত্র দিয়েছিলেন, তাঁদের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই শর কম নয়, যা আজও বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত। প্রতিটি চিঠিতে ‘বিসমিল্লাহ’ পূর্ণবাক্যটি পবিত্র কোরআনের ভাষায়ই লেখা আছে। যেমন—রোমসম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে প্রেরিত প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র পত্র : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

আল্লাহর বান্দা ও রাসুল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে রোমসম্রাট হিরাক্লিয়াস বরাবর।

ন্যায়ের পথের অনুসারীদের প্রতি সালাম।…আসো আমরা এমন এক বিষয়ে (অর্থাৎ তাওহিদের বিষয়ে) ঐকমত্যে পৌঁছি, যাতে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। আর তা হচ্ছে, আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করব না…—মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’ (বুখারি)

বস্তুত ‘বিসমিল্লাহ’র প্রবল শক্তি ও বরকত আছে। আমরা প্রায়ই কথা প্রসঙ্গে বলি ‘বিসমিল্লায় গলদ’। জিজ্ঞাসা হলো, ‘বিসমিল্লাহ’র মতো বরকতময় বিষয় কী করে আমাদের চেতনায় ‘গলদ’ সৃষ্টি করল যে ‘বিসমিহি তালা’র দরকার পড়ল?  সুতরাং বলা ও লেখায় ‘বিসমিল্লাহ’র ব্যবহার হলো পবিত্র কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা।  অন্য কিছু লেখা বা বলায় আল্লাহর নাম স্মরণের তৃপ্তি ও বরকতের সম্ভাবনা নেই। বরং বলা হয়ে থাকে ‘…আগের সব আসমানি কিতাবের সার নির্যাস রয়েছে আল-কোরআনে। কোরআনের সার নির্যাস আছে সুরা ফাতিহায়। সুরা ফাতিহার সার নির্যাস রয়েছে বিসমিল্লাহর মধ্যে…এরই সঙ্গে বিসমিল্লাহর ‘বা’ অক্ষরের মাহাত্ম্য অপরিসীম।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান 

ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments