Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মবয়স্ক মানুষের দ্বিন শেখার সহজ উপায়

বয়স্ক মানুষের দ্বিন শেখার সহজ উপায়

ইসলাম ধর্মের একটি শ্রেষ্ঠত্ব হলো, এর সূচনা হয়েছিল শিক্ষার সহযাত্রায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ প্রথম প্রত্যাদেশ ছিল, ‘ইকরা’ বা তুমি পড়ো। জ্ঞানার্জনের এই আদেশ প্রতিটি মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য। ইসলাম প্রতিটি মুসলমানের জন্য দ্বিনি শিক্ষা অর্জন করা ফরজ করেছে।

বয়স্করাও এই নির্দেশের বাইরে নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো ধরনের পার্থক্য না করেই বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দ্বিনি শিক্ষা অর্জন করা ফরজ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪) 

বয়স্করা কেন দ্বিন শিখবে

দ্বিনি শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর নির্দেশ ও শরিয়তের বিধি-বিধান নির্ভুলভাবে পালন করা। এই প্রয়োজন বয়স্কদের সবচেয়ে বেশি।

কেননা তাদের পক্ষে এই আত্মপ্রবঞ্চনায় ভোগারও সুযোগ নেই যে পরে শিখে নেব, বরং তারা ভাববে জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো আমি নির্ভুলভাবেই ইবাদত করব। আর এটাই আমার জীবনের মূল উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমারই ইবাদত করবে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)জ্ঞানের মর্যাদা বয়স্কদের জন্যও

কোরআন ও হাদিসে জ্ঞানার্জনের যেসব মর্যাদা বর্ণানা করা হয়েছে তাতে বয়সের কোনো তারতম্য করা হয়নি।

যেমন— মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন বহুগুণ।’ (সুরা : মুজাদালাহ, আয়াত : ১১)দ্বিনি শিক্ষায় বয়স বাধা নয়

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মাদরাসা বা ধর্মীয় শিক্ষালয়ের নাম দারুল আরকাম। এই মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন মহানবী (সা.) এবং শিক্ষার্থী ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম (রা.), যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বয়স্ক। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পাঠ গ্রহণ করে যেসব সাহাবি সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বয়স্ক। যেমন—আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), আবু জর (রা.), আবু দারদা (রা.) প্রমুখ।

ইমাম বুখারি (রহ.) সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘বয়স বেশি হওয়ার পরও ইলম শিক্ষা করো। কেননা সাহাবিরা (অধিকাংশ) বয়স বেশি হওয়ার পরই দ্বিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, পৃষ্ঠা ৩৯)জ্ঞান জীবনের মতোই অপরিহার্য

মুসলিম মনীষীরা জ্ঞানকে জীবনের মতোই মূল্যবান মনে করতেন। ফলে তাঁরা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জ্ঞানচর্চায় লিপ্ত থাকতেন। যেমন—আবু আমর ইবনুল আলা (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বৃদ্ধ বয়সে ইলম শিক্ষা করা কি উত্তম কাজ? তিনি উত্তরে বলেন, বেঁচে থাকা যদি তার জন্য উত্তম হয় তাহলে ইলম অর্জন করা কেন উত্তম হবে না? (আল ফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ : ২/১৬৭)

সাফল্যের দৃষ্টান্ত

ইসলামের ইতিহাসে বহু মনীষী বয়স বেড়ে যাওয়ার পর দ্বিনি শিক্ষা অর্জন করেছেন এবং নিজেদেরকে দৃষ্টান্তে পরিণত করেছেন। যেমন—আলী ইবনে হামজা আল কিসায়ি (রহ.)। তিনি ইমাম কিসায়ি নামেই বেশি পরিচিত। তিনি আরবি ব্যাকরণ ও কিরাত শাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম। তিনি বেশ বয়স হওয়ার পর জ্ঞানার্জন শুরু করেন। একইভাবে ইমাম ইবনে হাজম (রহ.)-ও বয়স বেড়ে যাওয়ার পর দ্বিনি শিক্ষা অর্জন শুরু করেন। (আমবাউর রুয়াত : ২ /২৭১)

দ্বিন শেখার সহজ উপায়

আল হামদুলিল্লাহ, বর্তমানে বয়স্ক মানুষের দ্বিন শেখার নানা সহজলভ্য উপায় রয়েছে। যেমন—

১. কোরআন শিক্ষার আসর : এখন দেশের বহু মসজিদে বয়স্কদের জন্য কোরআন শিক্ষার আসর অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ দিন থেকে তিন মাস পর্যন্ত মেয়াদি এসব মসজিদভিত্তিক কোর্সে বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের পাশাপাশি জরুরি মাসয়ালা, দোয়া ও হাদিস শেখানো হয়।

২. আলেমদের সান্নিধ্য : হক্কানি পীর ও আল্লাহভীরু আলেমদের সান্নিধ্য বয়স্ক লোকদের দ্বিন শেখার সহজ উপায় হতে পারে। বয়স্ক লোকেরা তাদের কাছ থেকে অজানা বিষয়গুলো জেনে নেবে।

৩. বই-পুস্তক পড়া : বিশুদ্ধ চিন্তার অধিকারী আলেম ও বুজুর্গদের বই মানুষের জীবন পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শর্ত হলো, কোন বই পড়বে তা আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উত্তম।

৪. দ্বিনি মজলিসে অংশ নেওয়া : বয়স্ক মানুষ হক্কানি আলেমদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দ্বিনি মজলিসগুলোতেও অংশ নিতে পারে। এতে অল্প সময়ে অধিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়।

আল্লাহ সবাইকে দ্বিন শেখার তাওফিক দিন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments