চট্টগ্রাম বন্দরে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী বড় আকারের বাল্ক কার্গো জাহাজ ‘এমভি কমন এটলাস’ ভেড়ার (বার্থিং) বিষয়টি নিঃসন্দেহে আনন্দের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়ালিংফোর্ড কর্ণফুলী নদীর দুই পার ও চ্যানেল নিয়ে গবেষণার পর বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাতেই বন্দর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব বলে মতামত প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ঘটাতেই গতকাল প্রথমবারের মতো বড় জাহাজ বন্দরের সিসিটি-১ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। বন্দরের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ও ১৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়ত। এরপর ১৯৮০ সালে ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ও ১৭০ মিটার দৈর্ঘ্য, ১৯৯০ সালে ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ও ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য, ১৯৯৫ সালে ১৮৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ২ মিটার ড্রাফট এবং ২০১৪ সাল থেকে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ত।
বন্দরকেন্দ্রিক জরিপ প্রতিষ্ঠান লয়েডস লিস্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০ দ্রুততম বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রামের স্থান ৫৮। এ অগ্রগতি সত্ত্বেও কনটেইনার জট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে মুক্ত করতে না পারার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বড় আকারের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হওয়ায় বর্তমানে কনটেইনার ও পণ্য পরিবহণ খরচ হ্রাসসহ ছোট জাহাজের গমনাগমন কমে আসায় বহির্নোঙরে জাহাজজটও কমবে। পাশাপাশি কমবে জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম বা গমনাগমনের সময়। বস্তুত বন্দর জেটিতে বড় আকারের জাহাজ প্রবেশের সুফল হিসাবে একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কনটেইনার বা পণ্য পরিবহণ করা গেলে স্বাভাবিকভাবেই পরিবহণ খরচ কম পড়বে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান তো হবেনই; উপরন্তু সাধারণ ভোক্তারাও এর সুফল পাবেন। এ ছাড়া বিদেশে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম বাড়বে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
বাণিজ্যের প্রসারে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এর অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে অধিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধসহ উদ্ভূত যে কোনো সমস্যা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করা না গেলে তা দেশের আমদানি-রফতানি, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে-এটাই প্রত্যাশা।