Saturday, April 1, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামপ্লট-ফ্ল্যাট নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে

প্লট-ফ্ল্যাট নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করতে হবে

প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়ে আসছে। এক শ্রেণির রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানি নির্ধারিত অর্থ ও কিস্তি বুঝে পেয়েও ক্রেতাদের প্লট কিংবা ফ্ল্যাটের দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে না। তাদের এ ধরনের হয়রানি ও প্রতারণার বিষয় কারো অজানা না থাকলেও প্রতিকার পাওয়ার তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় নেই। অনিবন্ধিত কিছু রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানি বিশেষভাবে এই হয়রানি ও প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিবন্ধন ছাড়া কীভাবে কোনো রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানি প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবসা করতে পারে, তা কারো বোধগম্য নয়। রাজউক আছে, রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানিগুলোর সংগঠন আছে, বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আছে, আছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব প্রতিষ্ঠান বা কর্র্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেমন করে ধোকাবাজি ও প্রতারণার এ ব্যবসা চলতে পারে? রাজউক অনিবন্ধিত রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হতে অনুরোধ জানিয়ে তার দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে করছে। রিহ্যাব ও বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলাপারস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তারা এ প্রসঙ্গে আরো বলেছে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি কোম্পানির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। বলা আবশ্যক, নিবন্ধন ছাড়া কোনো রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানির ওই দুটি সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করার কথা নয়। বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় ও সর্তক থাকলে ভুয়া রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানি গড়ে ওঠা ও টিকে থাকা সহজ হতে পারে না। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অমনোযোগ, অবহেলা ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার কারণেই এ ধরনের একটি গুরুতর সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। প্রতারিত ও বঞ্চিত হাজার হাজার ক্রেতা তাদের প্লট ও ফ্ল্যাট পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ পর্যন্ত কামনা করেছে। এ থেকেই বুঝা যায়, ক্রেতারা কতটা অসহায় ও নিরালম্ব হয়ে পড়েছে।

জমি, প্লট বা ফ্ল্যাট নিয়ে প্রতারণা অনেক আগে থেকে চললেও উপযুক্ত প্রতিবিধান না হওয়ায় তা এখন কঠিন সমস্যায় পরিণত হয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, রাজউকের কাছে শত শত প্রতারণার অভিযোগ আসে। তার উল্লেখ, অনেক কোম্পানি আছে, যাদের ক্রেতারা টাকা পরিশোধের পর ১০/১৫ বছরেও প্লট বা ফ্ল্যাট বুঝে পায়নি। তারা টাকাও তুলতে পারছে না। হয়রানি ও প্রতারণার শিকার প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিকরা বিভিন্ন সময় আবেদন-নিবেদন, প্রতিবাদ বিক্ষোভ ইত্যাদি করেছে। পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে। কিন্তু ফল খুব কমই পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো ফল পাওয়া গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। অনেকে সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে কেনা প্লট বা ফ্ল্যাটের দখল বুঝে না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে সামান্য অর্থে অন্যের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই ‘অন্য’ সাধারণত রিয়েল অ্যাস্টেট বা আবাসন কোম্পানির কাছের মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে এক টুকরো জমি বা প্লট কিংবা একটি ফ্ল্যাট সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নস্বরূপ। প্রতারকের খপ্পরে পড়ে এই স্বপ্ন যখন মরীচিকায় পরিণত হয়, তখন এরচেয়ে দুঃখের আর কিছু থাকে না। অবশ্য শুধু ভুয়া রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানিই এ জন্য দায়ী নয়, অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতার দায়ও সমধিক। তাদের অসচেতনতা, অসতর্কতা ও লোভ কিংবা বোকামী এ জন্য অনেক সময় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কোম্পানি নিবন্ধিত কিনা, তার সুনাম আছে কিনা, কথা বা চুক্তি প্রতিপালনে সৎ কিনা ইত্যাদি দেখে চুক্তি করা উচিৎ। দাম কিছু কম বলে না বুঝে, না শুনে চুক্তি করলে ঠকার আশংকা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও প্রতারিত হতে হয়। দেখা যায়, কারো উপযুক্ত স্থানে জমি থাকলে সে হাউজিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রীর বিজ্ঞাপন বা নোটিশ দেয়। হাউজিংয়ের ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা এমন বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তি করলে ক্রেতার বঞ্চিত বা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি তো থাকবেই। কাজেই ক্রেতাকেও সতর্ক ও সাবধান হতে হবে।


ভুয়া রিয়েল অ্যাস্টেট ও আবাসন কোম্পানির লক্ষ্যই থাকে প্রতারণা করার। তাই তাদের ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। যারা নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্য অর্থ ও কিস্তি পাওয়া সত্ত্বেও চুক্তি অনুযায়ী প্লট বা ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়নি, দিচ্ছে না তাদের শনাক্ত করতে হবে। তাদের নিবন্ধন আছে কিনা, যাচাই-বাচই করে দেখতে হবে। প্রতারক কোম্পানির মালিক কারা, তাদের সঙ্গে সরকারি দলের সম্পর্ক আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। সাধারণত সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিরাই অধিকাংশ অনৈতিক-অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেছেন, রাজউক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। নিবন্ধিত নয়, এমন ডেভলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিহ্যাব ও ল্যান্ড ডেভলপার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে বিভিন্ন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে। আবশ্যক মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। এই খাতে স্বচ্ছতা ও শৃংখলা যে কোনো মূল্যে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে মানুষ হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে থাকবে, এটা চলতে পারে না। দরকার হলে এ বিষয়ক আইনের পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করতে হবে এবং আইন ও ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments