Monday, March 20, 2023
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিপ্রযুক্তি পণ্য কিনছেন, কিন্তু ওয়ারেন্টি আছে তো!

প্রযুক্তি পণ্য কিনছেন, কিন্তু ওয়ারেন্টি আছে তো!

নিজেদের প্রয়োজনেই বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি পণ্য, যেমন—মোবাইল কম্পিউটার ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রয়োত্তর সেবা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওই সময়ের মধ্যে পণ্যের কোনো সমস্যা হলে বিনা মূল্যে তারা তা সারিয়ে দেয়। তবে বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা না থাকলে ভোক্তা পর্যায়ে অনেক সময় নানা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়।

মোবাইলের ওয়ারেন্টির ধরন

নির্মাতা ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিভিন্ন ধরনের ওয়ারেন্টি বা বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন—দেশের মোবাইল নির্মাতা ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্মার্টফোন ও ফিচার ফোনসহ গেজেটগুলোর সাধারণত এক বছরের বিক্রয়-পরবর্তী ওয়ারেন্টি সেবা প্রদান করে থাকে। এই এক বছরের সীমার মধ্যে ব্যাটারি চার্জারের ওয়ারেন্টি সেবা থাকে ছয় মাস এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে তা সাধারণত এক বছর হয়ে থাকে। তবে এখানে বেশ কিছু শর্ত থাকে, যেমন—ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ব্যবহারজনিত সমস্যা, যেমন—ফোনটি পানিতে পড়ে গেলে বা ভেঙে গেলে বা আগুনে পুড়ে গেলে ওয়ারেন্টিসেবা বাতিল হয়ে যায়। এ ছাড়া ওয়ারেন্টি সীমার মধ্যে অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার ছাড়া অন্যত্র ফোন রিপেয়ার করা বা রিপেয়ারের চেষ্টা করা হলেও ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী ওয়ারেন্টিসেবা থেকে বঞ্চিত হন। তাই ঠিকভাবে বিক্রেতার সেবা পেতে হলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে ওয়ারেন্টির এই শর্তাবলিগুলো প্রতিষ্ঠান ও পণ্য ভেদে ভিন্ন হতে পারে। এ জন্য কোনো পণ্য কেনার আগে সেই পণ্যের বিক্রয়সেবা ও তার পেছনের বিস্তারিত শর্তাবলিগুলো ভালোভাবে জেনে ও বুঝে নিতে হবে। এভাবে ক্রেতার সেবাকেন্দ্রিক ভোগান্তি বা ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।

তবে বাংলাদেশে অবৈধ ও চোরাইপথে কিছু মোবাইল ফোন আমদানি করা হয় যেগুলোর কোনো ওয়ারেন্টিসেবা পাওয়া যায় না। শুধু বৈধভাবে আমদানীকৃত মোবাইল ফোনগুলোতে সরবরাহকারী বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা প্রদান করে থাকে। তাই নতুন মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে মোবাইল ফোনটি বৈধভাবে আমদানীকৃত কি না। এটি যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নিজস্ব সার্ভার রয়েছে। মোবাইল ফোন কেনার আগে সেটির আইএমইআই নম্বর লিখে ২৬৯ ৬৯ নম্বরে মেসেজ পাঠালে ফিরতি মেসেজে মোবাইলটি বৈধভাবে আমদানি কি না তা জানা যাবে।

যত্রতত্র মেরামত নয়

বেশির ভাগ মোবাইল নির্মাতা ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান দেশব্যাপী নিজস্ব ও অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। তাই ব্যবহূত পণ্যের যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে তা যত্রতত্র মেরামতের চেষ্টা না করে অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার থেকে মেরামতের পরামর্শ দেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। কেননা অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারগুলোতে নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে মেরামত প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া কোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হলে সেটিও অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস করে নেওয়াই সর্বোত্তম। কারণ সার্ভিস সেন্টার ছাড়া অন্যত্র যেসব যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় সেগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও অনেক সময় সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের হয়ে থাকে, যেগুলো ব্যবহারে মোবাইল বা অন্যান্য পণ্যের নির্দিষ্ট আয়ু ও কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়।

এখানে উল্লেখ্য যে ওয়ারেন্টি সীমা শেষ হয়ে গেলেও নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে মোবাইল ফোন রিপেয়ার বা মেরামত করা যায়।

ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের ওয়ারেন্টির হালচাল

বাংলাদেশের ল্যাপটপের বাজারে সাধারণত পণ্যভেদে এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এই ওয়ারেন্টি সীমার মধ্যে কিছু কিছু ল্যাপটপে ব্যাটারি চার্জারের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ১২ মাসের ওয়ারেন্টি দেওয়া হয়। তাই ল্যাপটপ কেনার আগেই সেটির ওয়ারেন্টির বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।

মোবাইল ফোনের মতো ল্যাপটপের ওয়ারেন্টি পেতে হলেও সাধারণ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যেমন—ভেঙে গেলে বা আগুনে পুড়ে গেলে বা পানি ঢুকে নষ্ট হলে সাধারণত ওয়ারেন্টিসেবা বাতিল হয়ে যায়। এ জন্য ব্যবহারের সময় বিশেষ নজর রাখতে হবে। ল্যাপটপের যেকোনো সমস্যা হলে সার্ভিস সেন্টার ছাড়া করা যাবে না, সে ক্ষেত্রে যত্রতত্র রিপেয়ার করা কিংবা রিপেয়ারের চেষ্টা করা হলে কম্পানি প্রদত্ত ওয়ারেন্টি সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।

গেজেটের ওয়ারেন্টি

স্মার্টফোন ল্যাপটপের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গেজেটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় গেজেটসদৃশ পণ্যের বিক্রয়োত্তর সেবার ক্ষেত্রে। অপেক্ষাকৃত ভালো ব্র্যান্ডগুলো তাদের বিভিন্ন গেজেট, যেমন—ইয়ারফোন, পাওয়ার ব্যাংক, স্মার্ট ঘড়ি, ফিটনেস ব্যান্ড, ব্লুটুথ স্পিকার ইত্যাদিতে বিভিন্ন মেয়াদে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করে থাকে। তাই কোনো গেজেট কেনার আগে সেটিতে বিক্রয়োত্তর সেবা আছে কি না জেনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে বিক্রয়োত্তর সেবার শর্তাবলিগুলোও জেনে নিতে হবে। গেজেটের ওয়ারেন্টি পেতে সাধারণত পণ্যটির ক্রয় রসিদ ও প্যাকেট সংগ্রহ করতে হয়। কেননা বেশির ভাগ গেজেটের বিক্রয়সেবা নিতে হলে ক্রয় রসিদ বক্স প্রদর্শন করতে হতে পারে।

চার্জার ব্যবহারে সাবধান

বেশির ভাগ মোবাইল ও ল্যাপটপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের চার্জারে ছয় মাসের বিক্রয়সেবা প্রদান করে থাকে। এই সময়সীমার মধ্যে চার্জার নষ্ট হলে তা বিনা মূল্যে রিপ্লেস করে দেয় তারা। ল্যাপটপ কেনার পর চার্জার নষ্ট হলে অনেক ব্যবহারকারী  যেকোনো দোকান থেকে চার্জার কিনে ব্যবহার করেন। কিন্তু চার্জারের মান ও সক্ষমতা সঠিক না হলে তা পুরো মোবাইল বা ল্যাপটপের আয়ু কমিয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ভুল চার্জার ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চার্জার পরিবর্তন কিংবা নতুন চার্জার কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই মোবাইলের মূল চার্জারের সক্ষমতার চার্জার কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

হয়রানির শিকার হলে করণীয়

অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায় থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়, যাবতীয় শর্তাবলি মানা এবং ওয়ারেন্টি সীমা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে উপযুক্ত সেবা মেলে না কিংবা অনেক সময় ভোগান্তির মতো অভিজ্ঞতা ঘটে অনেকের সঙ্গে।

অনেক ক্ষেত্রেই ভোক্তাদের এমন অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মোবাইল বা ল্যাপটপের বিক্রয়োত্তর সেবাকেন্দ্র থেকে সেবা না পেলে বা সেবা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বা বিক্রয় সেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ জন্য সার্ভিস সেন্টারগুলোতে রক্ষিত নোটিশ বোর্ডে উল্লিখিত অভিযোগের জন্য যোগাযোগের নম্বর বা কম্পানির হটলাইন নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ছাড়া কম্পানির ফেসবুক পেজ কিংবা মেইলের মাধ্যমেও আপনার অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এর পরও সমাধান না পেলে উপযুক্ত তথ্য সাপেক্ষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলা দায়ের করতে পারেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments