চলচ্চিত্রের মতো স্বার্থপর জায়গা আর দ্বিতীয়টি নেই। এ রকম কথা স্বয়ং এ অঙ্গনের মানুষের কাছ থেকেই শোনা গেছে। এ কথার যে যর্থাথতা রয়েছে সেটারই প্রমাণ যেন আরও একবার মিললো। জীবনের অধিকাংশ সময় চলচ্চিত্রের পেছনে ব্যয় করলেও শেষ বয়সে এসে নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। একটা সময় যখন অভিনয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন চারপাশ জুড়ে অনেক মানুষ থাকলেও এখন সঙ্গ দেয়ার মতোও কেউ নেই। চলচ্চিত্রের চেনা মানুষগুলো যেন খুব অচেনা। গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ হলেও ৮১ বছর বয়সী এ অভিনেতার খোঁজ একটি বারের জন্য কেউ নেয়নি। তাই তো পরিবারের সদস্যদের কণ্ঠে শোনা গেল শুধু আক্ষেপ আর অভিমান।গত রোববার এক আলাপচারিতায় অভিনেতার পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন বলেন, যাদের সঙ্গে বাবা কাজ করতেন কেউ কোনো খোঁজখবর নেন না। শিল্পী সমিতি, এফডিসি থেকে খোঁজ-খবর নিবেন এতটুকু তো তার প্রাপ্য। উনি একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে সেভাবে সম্মান দেয়া হয়নি। আসলে আমাদের দেশে এই রীতিটা নেই। সিনিয়ররা কেউই সেভাবে সম্মান পাননি শেষ বয়সে। এখন আমরা আসলে কিছু আশাও করি না। আপনারা দোয়া করবেন বাবা যেন ভালো থাকে। সোনিয়া ইয়াসমিনের কাছ থেকে জানা যায়, হাড়ক্ষয়সহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক বছর ধরেই চার দেওয়ালে বন্দি জীবন কাটছে প্রবীর মিত্রের। তবে শেষ দেড় বছরে তার শারীরিক অবস্থা খানিকটা গুরুতরই। হাঁটুর ব্যথার কারণে এখন একেবারেই হাঁটা-চলা করতে পারেন না। মাঝে চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন প্রবীর মিত্র। বর্তমানে ধানমণ্ডি ৮ নম্বরে ছেলের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। প্রবীর মিত্র স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। প্রায় পাঁচ দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিতাস একটি নদীর নাম, দুই পয়সার আলতা, বড় ভালো লোক ছিল, বেদের মেয়ে জোসনাসহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সবশেষ এসডি রুবেলের পরিচালনায় ‘বৃদ্ধাশ্রম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে তাকে। ১৯৪০ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্রের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। স্ত্রী অজন্তা মিত্রকে ২০০০ সালে হারানোর পর ২০১২ সালে তার ছোট ছেলে আকাশও পরপারে পাড়ি জমান।