Friday, September 29, 2023
spot_img
Homeলাইফস্টাইলপ্রথম সন্তানের হৃদরোগ হলে কি দ্বিতীয়টিরও হয়?

প্রথম সন্তানের হৃদরোগ হলে কি দ্বিতীয়টিরও হয়?

জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশু ছোটবেলা থেকেই নানান স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে।  তাদের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।

অনেকেরই জানা নেই জন্মগত হৃদরোগ হলেও অনেক শিশু জন্মের সময় স্বাভাবিক থাকে।  জন্মের ৩ মাস পর শিশুর গুরুতর হৃদরোগ ধরা পড়তে পারে। 

প্রথম সন্তানের জন্মগত হৃদরোগ হলে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য কখন পরিকল্পনা করা উচিত, আর দ্বিতীয় শিশুরও জন্মগত হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সভাপতি বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি এবং সভাপতি পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন।

স্বাভাবিক পদ্ধতিগত শরীরের রক্তচাপ প্রায় ১০০-১২০ mmHg (সিস্টোলিক) এবং ৬০-৮৯ mmHg (ডায়াস্টোলিক)। ফুসফুসের রক্তচাপ সিস্টেমিক চাপের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ। হৃৎপিণ্ডের ডান দিকে গড় SpO2 হলো ৬০-৬৫% এবং বাম দিকে SpO2 হল >৯৫%। সাধারণত, বাম হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবেশের একটি মাত্র পথ থাকে, তা হলো পালমোনারি সঞ্চালনের মাধ্যমে। 

মায়ের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ফুসফুস অ্যামনিওটিক তরলের মধ্যে একটি ভাসমান বেলুনের মতো থাকে, তাই বিকল্প চ্যানেলগুলো, অর্থাৎ পেটেন্ট ফোরামেন ওভেল এবং পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস পাওয়া যায়।  এ চ্যানেলগুলো জন্মের পরে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।  যদি বন্ধ না হয়, তাহলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।  অন্যদিকে কিছু জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এগুলো খোলা থাকা অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে।  সেক্ষেত্রে খোলা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেওয়া হয়।

জন্মগত হৃদরোগের লক্ষণ 

বিভিন্ন উপসর্গ দেখে শিশুর মধ্যে হৃদরোগ শনাক্ত করা যায়। তবে, বয়স অনুসার লক্ষণগুলো পরিবর্তিত হয়। কিছু কিছু উপসর্গ থাকলে শিশুর হৃদরোগ আছে তা দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। জন্মগত হলেও জন্মের পর বা কিছু সময়ের জন্য জন্মগত হৃদরোগের কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। কখনও কখনও সাধারণ জন্মগত হৃদরোগ, যেমন ‘হোল-ইন-হার্ট’ জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহে শনাক্ত করা যায় না। সবচেয়ে সাধারণ হৃদরোগ যেমন ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট এবং পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস প্রথম ১-৪ সপ্তাহে লক্ষণহীন থাকতে পারে। এটি ফুসফুসের চাপ এবং রক্তপ্রবাহ পরিপক্কতায় বিলম্বের কারণে ঘটে থাকে। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ত্রুটি এবং পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস (ভিএসডি এবং পিডিএ) ধীরে ধীরে ফুসফুসের চাপ ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং হার্টের আকারও বাড়ায়। 

হৃৎপিণ্ডে একটি বড় ছিদ্র হলে ফুসফুস এবং শরীরের মধ্যে রক্ত প্রবাহের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। হৃৎপিণ্ডে একটি বড় ছিদ্র বর্ধিত শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রচেষ্টার জন্য হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়।  এর ফলে শরীরের বৃদ্ধি ধীর হয়, দুর্বল বা ওজন বৃদ্ধি পায় না। জন্মের ৪-৬ সপ্তাহ পরে লক্ষণগুলো শুরু হয়।

অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট হলো আরেক ধরনের ছিদ্র, যা অনেক বছর ধরে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে। স্টেনোসিস বা ভালভের সংকীর্ণতা যে কোনো বয়সে এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারা পরীক্ষা করানো উচিত। 

যারা হৃদরোগের জন্য কিছু সূত্র খুঁজে বের করতে ক্লিনিকাল পরীক্ষা ছাড়াও বিশেষ কিছু পরীক্ষা যেমন বুকের এক্স-রে, ইকো এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি উপর ভিত্তি করে CHD-এর উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারে। নিম্নলিখিত বিশেষ বিশেষ লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই জন্মগত হৃদরোগের ব্যপারে শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

* দুধ খাওয়ার সমস্যা : শিশু যদি কিছু সময় দুধ চুষেই হাপিয়ে যায় এবং দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, তারপর আবার চুষতে শুরু করে অথবা দুধ খেতে বেশি সময় নেয় (>২০ মিনিট), কিংবা খাওয়ার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং ঘাম হয়।

* ওজন বৃদ্ধি সন্তোষজনক না হলে : শিশুর ওজন বৃদ্ধির হার বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ না হলে।

* ঘনঘন ঠান্ডা লাগা বা কাশি হওয়া : শিশুর বারবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাহলে আংশকা থাকে তার হার্টের ত্রুটি আছে।

* জ্বর বা কাশি ছাড়া, ক্রমাগত দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (এমনকি ঘুমের সময়) এবং বুকের পাজর বা খাঁচা দেবে যাওয়া।

* শিশুর হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত চলে (এমনকি ঘুমের সময়ও)। মা-ই এ বিষয়টি সহজে ধরতে পারবেন।

lPrecordial bulge : বুক একপাশে ফুলে যাওয়া। কোন কোন শিশু সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দ্রুত শ্বাস নিতে শুরু করে।

* নীল শিশু (Cyanotic Heart Disease) : শিশুর ঠোঁট, জিহ্বা এবং নখ নীলাভ হবে বা কান্নার সময় নীল হয়ে যায়। জন্মগত হৃদরোগের কারণে ত্বক, নখ, জিহ্বা এবং ঠোঁটের রঙ পরিবর্তন হতে পারে। এটি ঘটে যখন ভালো বা অক্সিজেন সমৃদ্ধ লাল রক্ত অক্সিজেন ক্ষয়প্রাপ্ত নীল রক্তের সাথে মিশে যায় এবং শরীরে সঞ্চালিত হয় যা ত্বক, নখ, জিহ্বা এবং ঠোঁটে সর্বদা বা কমপক্ষে যখন সে কাঁদে তখন স্পষ্ট হয়। এটি একটি গুরুতর জন্মগত হৃদরোগ, যার জন্য প্রাথমিকভাবে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়। উপরের কয়েকটি লক্ষণ বা সমস্যা পরিলক্ষিত হলে ডাক্তারের পরামর্শে জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহে হার্ট সার্জারি করাতে হবে।

জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর যত্ন

কিছু কিছু CHD-এর প্রাথমিক বা জরুরী হস্তক্ষেপ ও চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, অন্যথায় শিশুর বেঁচে থাকা ঝুঁকিতে পড়ে বা অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। CHD-এর লক্ষণ ও টাইপের উপর নির্ভর করে কিছু CHD নিয়মিত ফলো-আপের প্রয়োজন হয় এবং প্রথম দিকে প্রতি কয়েক সপ্তাহ পর পর প্রয়োজনীয় ফলো-আপ প্রয়োজন হতে পারে।

জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, তবে কিছু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাই মাতা-পিতাই সঠিক ভাবে যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারেন। যদি সময় মতো CHD নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় তবে বেশিরভাগ CHD নিরাময়যোগ্য। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি এবং কিছু ক্ষেত্রে দেরিতে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তবে, CHD-এর বেশিরভাগই সাধারণ ত্রুটি এবং অনেক ক্ষেত্রে শুধু ওষুধেই নিরাময়যোগ্য। 

যেসব শিশু সময়মতো চিকিৎসা পায়, তারা তাদের পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী জীবন ধারন করতে পারে। অন্যদিকে, CHD আক্রান্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না এবং তাদের একটি সীমাবদ্ধ ও পরিমিত জীবনধারা পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসাক্ষেত্রেও তাদের একাধিক পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে। নীল শিশুরা ডিহাইড্রেশন এবং রক্তস্বল্পতা সহ্য করতে পারে না, তাই এই নীল শিশুরা কান্না করলে তাদের সমস্যা গুরুতর হয়ে যায়, যাকে স্পেল বলা হয়। যখন তারা দ্রুত শ্বাস নেয় ও আরও নীল হয়ে যায় এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এই শিশুদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

CHD আক্রান্ত হলে সময়মতো চিকিৎসা সর্বোত্তম ফলাফল নিয়ে আসে। প্রথম সন্তান যদি CHD-তে আক্রান্ত হলে সেই মা যদি দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হন তাহলে অনাগত শিশুদের মধ্যে ২-৫% এর CHD-তে আক্রান্ত ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় প্রসূতি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলা উচিৎ। ১৬ থেকে ১৯ সপ্তাহের মধ্যে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে গর্ভের শিশুর CHD ধরা পড়লে গর্ভপাতের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিংয়েরও সুপারিশ করা হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments