সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ
নিকট অতীতে বাংলাদেশের ফুটবলে যত সাফল্য এসেছে, তার বেশির ভাগ এসেছে নারী ফুটবলে। আলাদা করে বলতে গেলে নারী ফুটবলের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন আসরে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ এবং ১৮ ফুটবলের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ। এসব কীর্তিকেও ছাড়িয়ে যাওয়া অর্জন হচ্ছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলা। ২০১৭ সালের পর ২০১৯ সালেও তারা খেলে ফুটবলের সেই কঠিন মঞ্চে। এসব আত্মবিশ্বাস নিয়েই দুই বছর পর ঘরের মাঠে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জয়ের সামনে বাংলাদেশ। ফাইনালে আজ তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হবে দুই দলের ফাইনাল।
পাঁচ দলের এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে নেপালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র-এর মধ্যদিয়ে।এরপর অবশ্য মারিয়া- তহুরাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের ম্যাচে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারানোর পর ভারতকেও বধ করেছে মেয়েরা। আর লীগের শেষ ম্যাচে পাত্তাই দেয়নি শ্রীলঙ্কাকে। শ্রীলঙ্কাকে গোলের মালা পরিয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নেয় ফাইনালে। ভারতের বিপক্ষে এই ফাইনাল নিয়েও বেশ আশাবাদী বাংলাদেশ দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তার মতে আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১২ গোল দেয়ার আত্মবিশ্বাস কাজে দিবে ফাইনালে। অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা শোনালেন আশার কথা। ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগুনোর কথা বলেছিলাম। ফাইনালের আগ পর্যন্ত আমরা সেটা করেছি। এখন ফাইনাল জিতে তার পূর্ণতা আনতে চাই’-বলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে ১৯ গোল করেছে বাংলাদেশ। এখনো টুর্নামেন্টে কোনো গোল হজম করেননি স্বাগতিক গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। অন্যদিকে টুর্নামেন্টে ১২ গোল দেয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র গোল হজম করেছে ভারত। তাই তো সামপ্রতিক পারফরম্যান্স, রেকর্ড, দলীয় শক্তির নিক্তিটা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকে আছে। তবে ম্যাচটি ফাইনাল বলে মারিয়াদের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন একটু সতর্ক। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন আমরা। এই আসরেও চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। লীগ পর্যায়ে ভালো খেলেছি, ফাইনালে আরও একটু ভালো খেলে শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে চাই।’
২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভুটানের মাটিতে বাংলাদেশ নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। করোনার জন্য এই টুর্নামেন্ট পিছিয়ে এই বছরের শেষদিকে গড়াচ্ছে। এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সাফের টুর্নামেন্টের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এই আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়াও আরেকটি বিষয়ে ছোটনদের প্রেরণা রয়েছে। ২০১৭ সালে এই কমলাপুর স্টেডিয়ামেই ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল। চার বছর পর সেই ভেন্যুতেই অনূর্ধ্ব-১৯ এর আসর। সেই অনূর্ধ্ব-১৫ দলের অনেক খেলোয়াড়ও রয়েছেন এই দলে। তবে এই সব তথ্য ও পরিসংখ্যান আমলে নিতে চান না ভারতের কোচ অ্যামবোক্স এলেক্স। গতকাল বাফুফে ভবনে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তিন বছর আগের হিসাব কষতে চাই না। ফাইনাল ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শিরোপা জিততে চাই।’ স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে শিরোপা জেতাটা কঠিন সেটা অবশ্য মানছেন এই ভারতীয়, ‘দল হিসেবে বাংলাদেশ অত্যন্ত সংগঠিত এবং স্বাগতিক সমর্থন রয়েছে তাদের। লড়াইটা অনেক কঠিন হবে। ফাইনালের আগে আমি কাউকে এগিয়ে রাখবো না সুনির্দিষ্টভাবে। তবে আমার দলের শিরোপা জেতার সামর্থ্য রয়েছে।’
বাংলাদেশ লীগ পর্যায়ে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল। পেনাল্টি থেকে করা সেই গোলের প্রতিবাদ করেছিলেন ভারতীয় কোচ। ফাইনালের আগে অবশ্য রেফারিং নিয়ে তেমন চিন্তা না করে এলেক্স বলেন, ‘ফুটবল ম্যাচে এ রকম কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমরা শিরোপা জয়ের জন্যই খেলবো’।