আপনাদের শুরুর সময়ের সাহিত্যের পরিবেশের সঙ্গে এখনকার পরিবেশে মিলালে কোনো ভিন্নতা চোখে পড়ে? এবং তার ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব?
: আমাদের সময়ে সাহিত্যচর্চায় সর্বত্র পাঠকের সমাগম ছিল। কারণ, বই ছিল বিনোদন ও জ্ঞানের
একমাত্র উৎস। বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক হওয়ায়
বই পড়ার আগ্রহ তেমন চোখে পড়ে না।
প্রযুক্তির এই পুঁজিবাদী সময়ে একজন কবি তার কবি সত্ত্বাকে কতটা লালন-পালন করতে পারে?
: বর্তমানে প্রযুক্তি ছাড়া আমরা নিজেদেরকে কল্পনাও করতে পারি না। প্রযুক্তি আমাদের জীবন যাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লেখকের সাহিত্য সৃষ্টিকে আতীতে বই বা পত্রিকা ছাড়া পৌঁছানো যেত না। বর্তমানে প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে।
লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন?
: একজন ভাববাদী লেখকের কাছে গ্রাম বা শহর সর্বত্রই সমান। লেখকের শহরকেন্দ্রিক প্রবণতা সৃষ্টির মানকে সমুজ্জ্বল করে তা নয়। তার ব্যক্তিসত্ত্বা মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রধান্য পাচ্ছে। কোন বিষয়গুলো বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত?
: বর্তমান সাহিত্যে সমসাময়িক বিষয়কেন্দ্রিকতার প্রবণতা দেখা যায়। প্রাধান্য পাওয়া উচিত জীবন ঘনিষ্ঠ নান্দনিকতা, সুখ-দুঃখ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন।
: ভালোবাসা হলো আত্মার পরিতৃপ্তি। বেঁচে থাকতে হলে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা আপরিসীম। অতীতে ভালোবাসায় মানুষ নিজেকে খুঁজে পেত, ভালোবাসাকে সম্মান করত যা এ আধুনিক যুগে চোখে পড়ে না।
এ সময়ে আমাদের সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান, কতটা বিকৃতির শিকার?
: প্রকৃতি ও মানব জীবনের কল্যাণই সাহিত্যের নিজস্ব সৌন্দর্য। এ সময়ে যে এমন প্রচেষ্টা নেই তা
হয়তো নয়। তবে উপস্থাপনা খানিকটা বিকৃত বলা
যেতে পারে।
প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো কতটা মন্দ?
: প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যে প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছে সত্যি, কিন্তু সাহিত্যের স্বাদ কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে। পাতা উল্টায়ে বই পড়ার মাঝে যে আনন্দ বা তৃপ্তি থাকে তা ইলেকট্রিক ডিভাইসে সম্ভব নয়।
গাজীপুরের সাহিত্যচর্চার বর্তমান অবস্থা কেমন?
কোন কোন দিকে যত্ন নিলে আরও সক্রিয় হতে পারে?
: গাজীপুরে সাহিত্যচর্চার প্রচার ও প্রসার আগের তুলনায় অনেকটা ভালো। স্থানীয় পত্রপত্রিকা থাকায়
আগ্রহী লেখকরা তাদের লেখা প্রকাশ করতে পারছে। আমার মতে, বইমেলা, সুধীজনের হস্তক্ষেপ নবীন লেখকদের উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে সক্রিয় হতে পারে।
বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন?
কেমন হওয়া উচিত?
: রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক একজন সাহিত্যক হিসাবে মূল্যায়ন করা কঠিন। কারণ কোনো ঘটনা যেখানে শেষ হয় কবির কল্পনা সেখান থেকে শুরু।
সাধারণের দেখা আর একজন কবির দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে সঠিকভাবে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের কোনো বৈরী সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না।
* জন্ম ৬ অক্টোবর ১৯৬২। কর্মজীবনে স্থানীয় একটি সরকারি কলেজে চাকরি করেছেন। বর্তমানে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস গবেষণা ফাউন্ডেশনের
প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বরত। ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ। উপন্যাস: ৩টি- ‘হৃদয় ছুঁয়ে যায়’, ‘আঁচল’, ‘স্মৃতিভ্রংশ’। কাব্যগ্রন্থ-৯টি