Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeজাতীয়পিন্ডি থেকে সরে দিল্লির অধীনস্থ হওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি -মেজর হাফিজ

পিন্ডি থেকে সরে দিল্লির অধীনস্থ হওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি -মেজর হাফিজ

ভারতের আনুগত্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ চালাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রওয়ালপিন্ডি থেকে সরে এসে দিল্লির অধীনস্থ হওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। বাংলাদেশের স্বাধীন চেতা মানুষ কখনোই এই ধরণের গোলামী মেনে নেবে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘অরক্ষিত স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ও গণতন্ত্রবিহীন বিপন্ন বাংলাদেশ: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, আজকে একটি রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু যে পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতি বিষয়ে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে থাকা এটা বর্তমান শাসক দলের অভ্যাস। তাদের সাধারণ সম্পাদক(ওবায়দুল কাদের) যখন বিপদে পড়ে তখন বলেন যে, দিল্লী আছে আমরা আছি।এই ধরণের কথা বলতে লজ্জ্বাবোধও তাদের হয় না। দিল্লী থাকলে এই সরকার আছে। কত খানি নির্লজ্জ্ব প্রতিবেশি দেশের আশ্রয়ে আনুগত্য স্বীকার করে যাচ্ছে। আমরা কি এজন্য যুদ্ধ করেছি? রাওয়ালপিন্ডি থেকে সরে এসে আমরা কি দিল্লীর অধীনস্থ হওয়ার জন্যই যুদ্ধ করেছি? কখনই না। বাংলাদেশের স্বাধীন চেতা মানুষ কখনোই এই ধরনের গোলামী মেনে নেবে না।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে মেজর হাফিজ বলেন, বিএনপি পথ নির্দেশ করেছে তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্বাধীনতার মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করার জন্যে, স্বাধীনতার লক্ষ্যসমূহকে বাস্তবায়ন করার জন্যে বিএনপি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিএনপির সংগ্রাম জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাবার সংগ্রাম, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে সংগ্রাম। আমরা দেশবাসীর জন্য সংগ্রাম করছি, এই সংগ্রামে অবশ্যই আমাদেরকে জয়ী হতে হবে, এই সংগ্রামে চুল-দাঁড়ি পেকে গেলেও মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে, আপনারা দেশের আদর্শ। আপনাদের দিকে তাঁকিয়ে একজন তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। যাদের আজকে চুল-দাঁড়ি সাদা হয়ে গেছে ১৭ /১৮ বছর বয়সে ছিলো সাব মেশিন গান- সেভেন বন্ড ৬২ চাইনিজ রাইফেল, তিনি বীরবিক্রমে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করেছেন, আজকে এই বৃদ্ধকে দেখে অনেকে মনে করতে পারবে না কিন্তু আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যেতে হবে।

দেশের বর্তমান অবস্থায় দেখে ৮০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম আক্ষেপ করে বলেন, দুঃখ লাগে ৮০ বছর বয়েসে গাড়ি পোঁড়ানো মামলায় এই স্বাধীনতার মাসে জেলে যেতে হলো। আমি আশা করি এজন্যে তারা (ক্ষমতাসীনরা) একদিন লজ্জ্বিত হবে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এভাবে অসসন্মানের। অপরাধ করলে নিশ্চয়ই সাজা হবে। কিন্তু আমি এবং আলতাফ হোসেন চৌধুরী (বিমান বাহিনী প্রধান) জনতা ব্যাংকের গাড়ি পোঁড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিন তো কোনো ঘটনাই ঘটেনি ঢাকা শহরে।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকার জন্যে দিল্লী আছি তো আমরা আছি। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এখন বৃদ্ধ বয়েসে, আগামী দিনগুলোতে আমরা-আপনারা আগামী প্রজন্মকে দীক্ষা দিয়ে যাবো দেশকে ভালোবাসো, দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মনমানসিকতা অর্জন করো। এটাই হলো আজকের দিনে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা, আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছি এই সংগ্রাম ব্যর্থ হতে পারে না। অবশ্যই দুঃশাসনের অবসান হবেই। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্ম তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান রাজনৈতিক দল তারা জনগণের ভোট পেয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দোষের কিছু নেই। ২৪ বছর অনেক অন্যায়-অবিচার-বঞ্চনার শিকার আমরা হয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ন্যায্য দাবিদার ছিলেন, সেটাই তিনি চেষ্টা করেছেন, দোষের কিছুই নেই। কিন্তু তার দলের অনুসারীরা প্রমাণ করে যে, স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি দিয়ে গিয়েছেন। তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেব মিলিটারি মুভেমেন্ট শুরু হওয়ার পরেই তিনি সম্ভবত সর্বশেষ শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করেছিলেন সেখানে টেপ রেকর্ডার নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন পাকিস্তান, সেনাবাহিনী আক্রমনাত্মকভাবে জনতার উপরে আক্রমণ করবে শিগগিরই.. রাজপথে তারা ছড়িয়ে গিয়েছে…আপনি স্বাধীনতার ঘোষণাটি দেন। তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) বলেছিলেন, আমি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নিতে পারি না, আমি বিচ্ছন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হবো যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেই, এটি হলো বাস্তব সত্য। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদকের কথা।

তিনি বলেন, তার (শেখ মুজিবুর রহমান) অনেক কৃতিত্ব আছে। কিন্তু একজন সৈনিক চট্টগ্রাম থেকে জীবন বিপন্ন করে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে এই কৃতিত্ব আপনাকে দিতে হবে। এটুকু কৃতিত্ব অন্যকে দিতে কেনো এতো অপরাগতা? কেনো বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানি এজেন্ট বলে প্রমাণ করতে চায়? তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধূলিসাত করে দিয়েছে। অবাক হয়ে ভাবি কিভাবে দেশটা নষ্ট হয়ে গেলো।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যা কিছু করে ভালো-খারাপ সব কিছু বিএনপি করেছে। আমরা ক্ষমতায় নেই এতো বছর, এই জিনিসপত্রের দাম নাকি বিএনপি বাড়াচ্ছে তাদের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য। আমিও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের শেষ ছয় মাস। চেষ্টা করেছি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে, ওই সময় বাজার দর মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিলো। আমরা জনগণকে খেজুরের বদলে বরই খাওয়ার উপদেশ দেইনি। আজকে মানুষ দিশেহারা দ্রব্যমূল্যের অবস্থায়।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সাহাবুদ্দিন রেজার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য ও গবেষণা বিষক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হালিম মিঞা, সৈয়দ সরোয়ার আলম, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ, ফরিদ উদ্দিন, মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শাহ নেছারুল হক, কাজী মনিরুজ্জামান মুনির, নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments