Wednesday, March 22, 2023
spot_img
Homeখেলাধুলাপাড়াগাঁয়ের মেয়েরা পর্তুগাল যাচ্ছে

পাড়াগাঁয়ের মেয়েরা পর্তুগাল যাচ্ছে

অজপাড়াগাঁয়ে তাদের বাড়ি। কে-ই বা চিনত এই মেয়েদের। কারো বাবা দিনমজুর, কারো বাবা কৃষক। ফুটবল এখন দেশজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে তাদের।

বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ময়মনসিংহের নান্দাইলের সিনহা জাহান শিখা, স্বপ্না আক্তার জেলি ও তানিয়া আক্তার তানিসা যাচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালডোর দেশ পর্তুগালে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় ক্রীড়া পরিদপ্তর বঙ্গমাতা নারী ফুটবলের সেরা ৪০ খেলোয়াড়কে নিয়ে বিকেএসপিতে দুই মাসের ক্যাম্প করে। সেই খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকেই গড়া একটি দল এখন প্রশিক্ষণের জন্য যাবে পর্তুগালে। এই দলেই সুযোগ পেয়েছে শিখা, স্বপ্না ও তানিয়া। এরই মধ্যে এই খেলোয়াড়দের পাসপোর্ট তৈরিসহ বিদেশ ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। আগামী জুলাইয়ে উড়াল দেবে তারা রোনালডোর দেশে। নান্দাইলের তিন গ্রামে এই মেয়েদের নিয়ে এখন মাতামাতি।

শিখার বাড়ি উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামে। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই নানার বাড়িতে বেড়ে উঠেছে সে। বিধবা নানিই তার দেখভাল করেছেন। দ্বিতীয় সংসার নিয়ে দিনমজুর বাবা অন্যত্র থাকলেও শিখার খোঁজখবর নেন নিয়মিত। তবে সাধ্যমতো কিছু করতে পারেন না। নানির বাড়িতে সামান্য ভিটায় একটি জরাজীর্ণ ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে শিখার খরচের ব্যয় মেটান নানি হালিমা বেগম। এখান থেকেই পাশের পাঁচরুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে সে। হালিমা বেগম জানিয়েছেন, নাতি ফুটবল খেলায় তাঁকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। এর পরও তিনি দমে যাননি। নাতিকে উৎসাহ জুগিয়েছেন খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। মুরগির ডিম বিক্রি করে সেই

টাকা দিয়েছেন সদরে গিয়ে খেলার জন্য। বাবা বিপ্লব মিয়া জানান, তিনি বর্তমানে ভাটি এলাকায় আছেন দিনমজুর (জিরাতি) হিসেবে ধান কাটতে। সেখানে মেয়ে তাঁকে ফোনে জানিয়েছে তার পর্তুগালে যাওয়ার কথা। সেটা কোন দেশ জানা না থাকলেও মেয়ে বিদেশ যাবে শুনেই খুশিতে আত্মহারা তিনি। শিখার নিজেরও খুশি ধরে না, ‘আমি একজন স্ট্রাইকার, আর যাচ্ছি রোলানডোর দেশে। আমার যে কত খুশি লাগছে তা বলে বোঝাতে পারব না! ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন আমার। ’

পাশের ইলাশপুর গ্রামের ফয়জুর উদ্দিনের মেয়ে স্বপ্না। বাবা কৃষিকাজ করেন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার বাড়ি। সেখান থেকে প্রতিদিন ৬০ টাকা খরচ করে সদরে এসে ফুটবল খেলতে হয়। মা সুরাইয়া বেগম জানান, সাত সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খেয়ে যান। এ অবস্থার মধ্যেও মেয়েকে খেলা থেকে বিরত থাকতে দেননি। এখন বিদেশে যাওয়ার খবরে এলাকার মানুষের উৎসাহ দেখে তিনিও খুশি। স্বপ্না গোলরক্ষক। তার ইচ্ছা জাতীয় দলে খেলার। তানিসা খেলে রক্ষণভাগে। দলকে আগলে রাখার দৃঢ়তায় নজর কেড়েছে কোচদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়ার মেয়ে সে। থাকার জন্য একটি ঘর ছাড়া কিছুই নেই তার। দুলাল জানান, মেয়ে ফুটবল খেলে, এতে তিনি অনেক কথা শুনেছেন। তার পরও মেয়েকে কখনো বলেননি খেলা ছাড়তে। নিজেরা না খেয়েও মেয়ে তানিসাকে ভালোমন্দ খাইয়েছেন, যেন শরীরটা সুস্থ ও শক্ত-সবল থাকে। তানিসারও স্বপ্ন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। পর্তুগাল যাওয়ার সুযোগ পাওয়াটাকে সে নিজের ভাগ্য মানছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments