আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের ও তাদের পূর্বপুরুষদের ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম, এমনকি তাদের জীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়েছিল, তারা কি দেখছে না যে আমি ভূপৃষ্ঠকে (তাদের জন্য) চতুর্দিক থেকে সংকুচিত করছি, তবুও কি তারা বিজয়ী হবে?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪)
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে দীর্ঘ জীবন পেয়েও পার্থিব ভোগ-বিলাসে লিপ্ত কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত ও নিদর্শন পেয়েও তারা আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসুলের প্রতি অবিশ্বাসী ছিল। মূলত দীর্ঘ জীবন ও ধন-সম্পদের ধোঁকায় কাফিররা আল্লাহর নিদর্শন থেকে বিমুখ হয় এবং মহান আল্লাহর নিদর্শনের ব্যাপারে গাফিল ও উদাসীন থাকে। আর এটাই কাফিরদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমি তাদের জন্য সব কিছু খুলে দিয়েছি, অতঃপর যখন তারা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে আমি হঠাৎ তাদের পাকড়াও করি, ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়ে। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৪৪)
পবিত্র কোরআনে কাফিরদের ভোগ-বিলাস দেখে প্রতারিত না হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বিভিন্ন দেশে অবিশ্বাসীদের বিচরণ যেন আপনাকে কিছুতেই বিভ্রান্ত না করে। এটা অল্পকালের ভোগ মাত্র, অতঃপর জাহান্নাম তাদের আবাস, তা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৬-১৯৭)
দুনিয়া সবার জন্য ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা। প্রকৃত ঠিকানা হলো আখিরাত। এটি মূলত ঈমান ও আমলের স্থান। মহানবী (সা.) ছিলেন দুনিয়াবাসীর মধ্যে সবচেয়ে নির্লোভ ব্যক্তি। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সা.) একটি চাটাইয়ের ওপর ঘুমিয়ে ছিলেন। এরপর উঠে দাঁড়ালে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে যায়। আমরা তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আপনার জন্য একটি আসন আনলে কেমন হয়? তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? আমি তো দুনিয়ায় একজন আরোহীর মতো, যে পথ চলছে। অতঃপর ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে চলে যায়। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৭)
আয়াতের দ্বিতীয়াংশে উল্লিখিত ভূপৃষ্ঠ সংকোচন থেকে মুসলিমদের বিজয় এবং মিথ্যাবাদী সম্প্রদায় ও তাদের আবাসস্থলের বিনাশ উদ্দেশ্য। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, যেকোনো স্থানের জ্ঞানী, সম্মানিত ও আলেমদের মৃত্যু এবং স্থানের বরকতশূন্য হওয়া উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যেকোনো অঞ্চলের উত্থান-পতন এবং জীবন-মৃত্যু সংঘটিত হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ একদলকে সম্মানিত করেন এবং একটি দলকে অপদস্থ করেন। এ ব্যাপারে সুরা রাদের ৪১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না যে আমি ভূপৃষ্ঠকে চতুর্দিক থেকে সংকুচিত করে আনছি? আল্লাহ আদেশ করেন, তাঁর নির্দেশ পরিবর্তনের কেউ নেই এবং তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ৪১)
গ্রন্থনা : মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ