পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে পুরোপুরি প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার এমন ইঙ্গিতই দিলেন ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডনাল্ড ব্লোম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতার শেষ দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। তবে এখন দুই দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ খবর দিয়েছে ডন।
খবরে জানানো হয়, গত মাসেই পাকিস্তানে আসেন ব্লোম। যখন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক বড় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখনই দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পাকিস্তানিদের মধ্যে এমনিতেই মার্কিনবিরোধী মনোভাব বেশ জোরালো। তারমধ্যে ইমরান খান ও তার দলের প্রভাবে এই মনোভাব আরও চাঙ্গা হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, মার্কিন ষড়যন্ত্রের কারণেই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। এ নিয়ে তিনি একাধিক সমাবেশ এবং মার্চ আয়োজন করেছেন।
বর্তমান সরকারকেও তিনি ‘বিদেশিদের দাস’ বলে আখ্যায়িত করেন। পাকিস্তানে এই মার্কিনবিরোধী মনোভাবই মূলত ওয়াশিংটনের জন্য তার পররাষ্ট্রনীতি কার্যকরের পথে সবথেকে বড় বাধা।
তবে এখন আবারও আশার বাণী শোনালেন ব্লোম। প্রায় চার বছর পর পাকিস্তানে ফুল-টাইম কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়া হলো। ডনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইমরান খানের অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন প্রথম থেকেই এই অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে আসছে। এখন আমাদের উচিৎ পাকিস্তানি সমাজের সবগুলো পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। গত ৭৫ বছর ধরে আমরা এভাবেই এগিয়ে গেছি। শুধু সরকারের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই হবে না, দেশের রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ ও তরুণদের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রকে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের মানুষের মনোভাব তিনি শুনবেন এবং বুঝার চেষ্টা করবেন। এরপর সেটিকে তিনি ওয়াশিটংটনকে জানাবেন। পাশাপাশি মার্কিন মনোভাবও তিনি স্পষ্ট এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে পাকিস্তানীদের কাছে তুলে ধরবেন। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আগ্রহী ছিল। এর প্রথম সুযোগ আসে যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান। গত ১৮ই মে নিউ ইয়র্কের একটি সম্মেলনে যোগ দেন বিলওয়াল। ওই সম্মেলনের সাইডলাইনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেন। সেই বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন তার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা জানান ব্লোম। তিনি বলেন, আগামি মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানা ধরনের মানুষ পাকিস্তান সফর করবেন বলে আশা করছি। এভাবেই দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক এগিয়ে যাবে। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান অংশীদারিত্বকে একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ৬ কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছিল। আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া মহামারি মোকাবেলায় পাক সরকারকে আরও ৯ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, শুধু সাহায্যই নয়, পাকিস্তানের বেসরকারি খাতের সঙ্গেও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়ে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং শিক্ষার মতো খাতের কথা উল্লেখ করে ব্লোম বলেন, এসব খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও পাকিস্তানের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে কিনা। তবে এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া থেকে বিরত ছিলেন তিনি।